Kelaghai River

নষ্ট বাস্তুতন্ত্র, কেলেঘাইতে মাছের খোঁজে হন্যে মৎস্যজীবীরা

নদী বললেই মাছের বিচরণ ক্ষেত্রে হিসাবে যে ছবি চোখের সামনে ভাসে তাতে বাদ সেধেছে নদীর দূষণ।

Advertisement

গোপাল পাত্র

পটাশপুর শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৫০
Share:

নদীর পাড়ে ভেঙে পড়ে রয়েছে মাছ ধরার ডিঙি নৌকা। নিজস্ব চিত্র

দূষণের জেরে নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানা রকমের মাছ। নদী বললেই মাছের বিচরণ ক্ষেত্রে হিসাবে যে ছবি চোখের সামনে ভাসে তাতে বাদ সেধেছে নদীর দূষণ।

Advertisement

নদীতে মাছের জোগানে ভাটা পড়ায় নদীতে মাছ ধরে দিন যাপন করা মৎসজীবীদের জীবিকা সঙ্কটে। তাই পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে কাজের খোঁজে কেউ চলে গিয়েছেন অন্য রাজ্যে। কেউ এখানেই খুঁজে নিয়েছে অন্য পেশা। নদীর পাড়ে পড়ে থাকা ভাঙাচোরা ডিঙিনৌকা জানান দিচ্ছে নদীপাড়ের মৎস্যজীবীদের কর্মহীনতার যন্ত্রণার কাহিনী।

পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর এবং ভগবানপুরের মধ্যে ১৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বয়ে গিয়েছে কেলেঘাই নদী। মূলত বর্ষার জলে পুষ্ট কেলেঘাই এক সময় মৎস সম্পদে ভরপুর ছিল। পশ্চিম মেদিনীপুর হয়ে কংসাবতী নদীর সঙ্গে একযোগে গিয়ে কেলেঘাই মিশেছে হলদি নদীতে। বর্ষাকালে চিংড়া, ভেটকি, বোয়াল, পাবদা, নয়না, আইড়, জলখা, ট্যাঙরা-সহ নানা রকমের মাছে ভরপুর নদীতে মাছ শিকারে দম ফেলার ফুরসত পেতেন না মৎস্যজীবীরা। কয়েকশো পরিবার এ ভাবেই তাঁদের সংসার চালাতেন। দু’দশক আগে পর্যন্ত নদীতে প্রচুর পরিমাণে মাছের আনাগোনা ছিল। ভরা মরসুমে দিনরাত কেলেঘাইতে মাছ শিকারের ব্যস্ত থাকতো জেলেরা।

Advertisement

২০০৮ সালের কেলেঘাই নদী ভাঙনের পর ছবিটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। বহু মানুষ ঘরবাড়ি বাসস্থান ও পরিজন হারিয়েছেন। গঙ্গা অ্যকশন প্ল্যানে কেলেঘাট-কপালেশ্বরী-বাগুই (কেকেবি) সংস্কার প্রকল্পে ২০১১ সাল থেকে নদী সংস্কার শুরু হয়েছে। তবে সেই কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। পরিবেশবিদদের দাবি, নদী সংস্কারের কারণে কেলেঘাই নদীতে বন্যার আতঙ্ক ঘুচেছে ঠিকই তবে নদী হারিয়েছে বাস্তুতন্ত্র। এখন নদীবক্ষে নেই কোনও হিজল গাছ। নেই ঝোপঝাড়। নদীর চরে চাষবাসের কারণে যথেচ্ছ ভাবে প্রয়োগ হচ্ছে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক। গরমের শুরুতেই শুকিয়ে যাচ্ছে নদী। জোয়ার ভাটার কারণে হলদি নদীর নোনা জল নদীর উৎসমুখে বহুদূর পর্যন্ত ঢুকে পড়ছে। ফলে নোনা জলের জন্য মিষ্টি জলের মাছের প্রজনন কমছে। ফলে নদী থেকে ক্রমশ বিলুপ্তির পথে মিষ্টি জলের মাছ। আর তাতেই জীবিকা সঙ্কটে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। বেঁচে থাকার তাগিদে পেশা বদল করতে হয়েছে সেলমাবাদ, তালাডিহা, ধকড়াবাঁকা, আমগেছিয়া, ভগবানপুর এলাকার মৎসজীবীদের। কেউ কাজ খুঁজতে চলে গিয়েছেন ভিন রাজ্যে। কেউ এলাকাতেই ইটভাটার শ্রমিক হয়ে গিয়েছেন। এমনই এক মৎস্যজীবী শ্রীহরি বর্মন বলেন, ‘‘আগের মতো নদীতে তেমন মাছ আসে না। মাছ ধরে পেট চালানোর মতো পরিস্থিতি নেই। তাই সংসার চালাতে সারা বছর মজুরের কাজ করতে হয়।’’

পটাশপুর-১ ব্লক জীববৈচিত্র্য কমিটির সম্পাদক সোমনাথ দাস অধিকারী বলেন, ‘‘অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নদী সংস্কার এবং নদীর চর এলাকার চাষাবাদে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের কারণে নদীর বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হতে বসেছে। মাছেদের খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ জলের জোগানের অভাব ঘটছে কেলেঘাই নদীতে। তাই এক কালে যে নদীতে মাছের অফুরন্ত জোগান থাকতো, আজ সেখানে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। জেলেরাও তাঁদের রুটি রুজি হারাচ্ছেন। মানুষের সচেতনতা বাড়ালে ফের কেলেঘাই ভরপুর হয়ে উঠবে মাছের জোগানে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement