সওয়ারি: নৈপুর ও দেহাটি রাস্তা ডুবেছে। মোটরবাইকের ভরসা নৌকা। নিজস্ব চিত্র
কোথায় নেমেছে বাঁধে ধস, কোথাও ভেঙেছে কাঁচাবাড়ি— গত দু’দিনের নিম্নচাপের বৃষ্টিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে এই বিক্ষিপ্ত ছবি দেখা গেলেও বাসিন্দাদের জলবন্দি দশার ছবিটা প্রায় সর্বত্র একই। গত কয়েকমাসে অন্তত চারবার এমন জলবন্দি দশায় নাজেহাল জেলাবাসী। জমা জল দ্রুত না সরে যাওয়ার পিছনে প্রতিবারই উঠে আসছে নিকাশি সমস্যার কথা।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় গড়ে ১৭৫.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে নন্দীগ্রামে— ২৪৪.৬ মিলিমিটার। নন্দীগ্রামের দাউদপুর কালিচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের একাংশ পুরোপুরি জলের তলায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, নন্দীগ্রামে বেলাউদয় খাল সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছে। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন সহজেই হয়েছে। উল্লেখ্য, এই খালটি নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের কৃষ্ণনগর থেকে দাউদপুর গড় চক্রবেড়িয়া হয়ে নাকশিরাচকে হলদি নদীতে মিশেছে। এলাকাবাসীর দাবি, খালের দুই পাড়ে অবৈধ নির্মাণের ফলে এর প্রস্থ কমেছে। তাই খাল দিয়ে জল বেরতে বাধা পাচ্ছে।
প্রবল বর্ষণে এগরা মহকুমায় বাগুই খাল ও কেলেঘাই নদীর জল গত তিনদিন ধরে বাড়ছিল। মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে বাগুই খালের জল পটাশপুরের নৈপুর, হরিদাসপুর, মাধবপুর, স্যাঁয়া, চকগোপাল, পদিমা, বেলদা, অমরপুর, কালোবাড়, বিশ্বনাথপুর-সহ একাধিক গ্রামে ঢুকেছে। বুধবার সকাল থেকে প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা বাড়ি ছেড়ে এলাকার উচুস্থান এবং স্কুলের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। নৈপুর ও দেহাটি রাস্তায় কোমর সমান জল জমে থাকায় গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। নৌকায় করে সেখানে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
জলমগ্ন নন্দকুমারের কুমোরআড়া গ্রাম। নিজস্ব চিত্র
ঘাটুয়া এবং সিংদা খালের জলে প্লাবিত হয়েছে ব্রজলালপুর, খাড়, শ্রীরামপুর, পঁচেট গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক মৌজা। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে এই এলাকায় ত্রিপল ও খাবার দেওয়া হচ্ছে। অমর্ষি এবং চিস্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে একাধিক মৌজায় ঘরবাড়ি জলে ডুবেছে। এগরা পুরসভার ৬, ৫, ৩ নম্বর ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়েছে। দুর্গতদের ত্রাণ শিবিরে রেখে খাবার দিচ্ছেন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। এগরার জল জমার পিছনে সব দিনই বেহাল নিকাশিকে দায়ী করেছেন আমজনতা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
কোলাঘাট ব্লকের দেড়িয়াচক, সিদ্ধা ১, ভোগপুর, বৃন্দাবনচক ইত্যাদি এলাকায় জলে ডুবে গিয়েছে রাস্তাঘাট। দেড়িয়াচক ডি-মহল গ্রামের অবস্থা শোচনীয়। নিকাশি বন্ধ করে এলাকায় যত্রতত্র ভেড়ি গড়ে ওঠার কারণেই এই জলবন্দি দশা বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে পাঁশকুড়া স্টেশন বাজার এলাকা। হাঁটু প্রমাণ জলে দাঁড়িয়েই এদিন পাইকারি আনাজ বাজারে বেচাকেনা চলে।স্থানীয় বাসিন্দা কল্যাণ রায় বলেন, ‘‘পুরসভা এখনও পর্যন্ত মাস্টার ড্রেনেজ প্রকল্প বাস্তাবায়িত না করার কারণেই এই অবস্থা।’’
হলদিয়ার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে একাধিক শিল্প সংস্থা। সেখান থেকে নির্গত জল এই ওয়ার্ডের উপর দিয়েই যায়। তাই এই ওয়ার্ডের বেশিরভাগ এলাকায় বর্তমানে জলবন্দি। আবার, কাঁথি শহরের পূর্বাঞ্চলের তিনটে ওয়ার্ড প্রায় জলমগ্ন। কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল যাওয়ার একমাত্র রাস্তা হাঁটু সমান জলের তলায় তলে গিয়েছে। খেজুরির বিস্তীর্ণ এলাকা জলে প্লাবিত। সেখানে একটি বয়া ভেসে গিয়েছে। কাঁথি-১ ও ৩, দেশপ্রাণ ব্লকের প্রচুর চাষের জমি জলের তলায়। জলমগ্ন রয়েছে রামনগর-১ ব্লকের অন্তর্গত বাখরাবাদ এলাকা জলমগ্ন।
তমলুক শহরে জেলা বিদ্যালয় (মাধ্যমিক) পরিদর্শক অফিস ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক অফিসে জল ঢুকেছে। জলে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিসের বহু নথিপত্র। তবে জেলা সদর তমলুকে ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশ বাদে তেমন ভাবে জল জমেনি।