তিয়াসা মান্না
অভাবের সংসারে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় ছিলেন বাবা-মা। তাই তাঁকে হোমে রেখে গিয়েছিলেন। হোমে থেকে যদি পড়াশোনাটা করতে পারে। নিরাশ করেননি তিয়াসা মান্না। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৭৭ নম্বর (৭৫.৪) পেয়েছেন তিনি। খুশির হাওয়া মেদিনীপুরের বালিকা হোমে। হোমের বাকিরাও ভাল ফল করেছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক মধুসূদন চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, “তিয়াসা খুব ভাল ফল করেছে। হোমে থেকে এই ফল প্রশংসারই। ও আরও বড় হবে।”
আপ্লুত মেদিনীপুরের এই সরকারি হোমের সুপার সুস্থিতি তিওয়ারিও। সুস্থিতিদেবীর কথায়, “আমরা জানতাম ও ভাল ফল করবে। ওর মধ্যে অদম্য জেদ রয়েছে।”
তিয়াসার বাড়ি সবংয়ের মোহাড়ে। এক চিলতে জমিতে ঘুপচি ঘর। বাবা তপন মান্না দিনমজুর। সামান্য আয়ে সংসার ভাল চলে না। মা চম্পা মান্না অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তিয়াসার বয়স তখন সাত। সেই সময় তাঁকে মেদিনীপুরের এই হোমে রেখে গিয়েছিলেন তপনবাবু। তপনবাবুর কথায়, “ওকে পড়ানোর মতো সামর্থ্য ছিল না। তাই হোমে রেখে আসি।” চম্পাদেবী বলছিলেন, “স্কুলে পড়ানোর খরচ জোগানো সম্ভব ছিল না। হোমে থাকলে মেয়েটা অন্তত দু’বেলা খেতে পাবে। পড়তে পাবে। এই আশাতেই ওকে মেদিনীপুরের হোমে রেখে আসি।”
মেদিনীপুরের এই হোমে স্কুল রয়েছে। তবে হোমের স্কুলে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো হয়। হোমের অদূরে রয়েছে রাঙামাটি হাইস্কুল। আবাসিকেরা এই স্কুল থেকেই উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনা করেন। তিয়াসা-সহ হোমের ৬ জন আবাসিক এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। সকলেই উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিয়াসা বাংলায় পেয়েছেন ৮৩, ইংরেজিতে ৬২, শিক্ষাবিজ্ঞানে ৮১, সংস্কৃতে ৭৬। তিয়াসার চোখে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন। তিয়াসা বলছিলেন, “স্বপ্নপূরণ আমাকে করতেই হবে। দেখা যাক কী হয়।” চম্পাদেবী বলছিলেন, “কলেজে পড়াশোনার খরচ অনেক। ওত টাকা কোথায় পাবো। জানি না মেয়েকে আর পড়াতে পারব কি না।” বলতে বলতে গলা ধরে আসে চম্পাদেবীর।