পাশে: স্কুল শিক্ষকদের সঙ্গে চিকিৎসকরা। নিজস্ব চিত্র
চুরি গিয়েছিল পাম্প, জলের অভাবে খাওয়া হচ্ছিল না প্রাথমিক স্কুল পড়ুয়াদের। খবরের কাগজে মিড-ডে মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা পড়ে এগিয়ে এসেছেন ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি ও পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের চার চিকিৎসক। তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে কিনে দিয়েছেন নতুন সাব মার্সিবল পা ম্প।
ঝাড়গ্রাম শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভালুকখুলিয়া গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের ঘটনা। গত ১৭ নভেম্বর রাতে ওই স্কুলের গভীর নলকূপের সাব মার্সিবল পাম্প চুরি যায়। তারপর পরিস্রুত জলের অভাবে মিড-ডে মিল রান্নায় সমস্যা হচ্ছিল। শুক্রবার চিকিৎসক প্রণত টুডু, শুভঙ্কর গায়েন ও প্রসেনজিৎ হেমব্রম ও শঙ্কর মুর্মুদের অর্থ সাহায্যে নতুন পাম্প বসল। ‘ডাক্তার কাকু’দের উদ্যোগে পরিস্রুত জল পেয়ে খুশি লালা মুর্মু, লক্ষ্মী শবর, সুমন মল্লিক, নেহা হাঁসদার মতো ১১৪ জন খুদে পড়ুয়া।
তবে নতুন বসানো পাম্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। নির্জন এলাকায় অরক্ষিত ভাবে রয়েছে স্কুলটি। পাঁচিলের বালাই নেই। চলতি বছরের গোড়ায় পুরসভার উদ্যোগে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য পুরনো সাব মার্সিবল পাম্পটি বসানো হয়েছিল। নভেম্বরেই চুরি যায় সেটি।
১১৪ জন পড়ুয়ার জন্য স্কুলে শিক্ষক আছেন পাঁচ জন। এক জন পার্শ্বশিক্ষক। বেশিরভাগ পড়ুয়াই দরিদ্র শবর, আদিবাসী ও অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত পরিবারের। দুপুরের ভরপেট খাবারটুকুর জন্য প্রতিদিন হাজির হয় বেশিরভাগ পড়ুয়া। স্কুলের টিচার ইনচার্জ মলয় বেরা জানালেন, “পুরসভার কলে অনেক সময় ঘোলা জল বেরোয়। সে জন্যই গভীর নলকূপ বসিয়ে ভুর্গস্থ জল তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু পাম্পটি চুরি যাওয়ায় গত দু’সপ্তাহ সমস্যা হচ্ছিল। চিকিৎসকদের উদ্যোগে আমরা অভিভূত।”
নতুন করে পাম্প বসানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিল ঝাড়গ্রাম পুরসভা। তার আগেই নিজেদের খরচে পাম্প বসানোর অনুমতি চান চিকিৎসকরা। পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “পুরসভার উদ্যোগে নতুন পাম্প দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু তাতে তো একটু সময় লাগেই। তার আগেই প্রণতবাবু চিঠি দিয়ে অনুমতি চান। আমরা অনুমতি দিয়েছি। এমন উদ্যোগ অত্যন্ত সাধুবাদযোগ্য।”
আর যাঁদের উদ্যোগে এমন একটা কাজ হল, তাঁরা বলছেন, ছোটদের স্কুলে জল নেই, শুনে আর থাকতে পারিনি। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শঙ্কর মুর্মুর বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরে। তাই তিনিও যোগ দিয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে। শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘একেবারেই সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমাদের এই মিলিত উদ্যোগ।”
প্রণতবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘পুরসভার অনুমতি নিয়ে পাম্প বসানোর ব্যবস্থা করলাম। কিন্তু স্কুলের চারপাশে পাঁচিল দেওয়াটা জরুরি। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।” ঝাড়গ্রাম পশ্চিমচক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (এসআই) সুপ্রিয় বর্মন বলেন, “ওই স্কুলে পাঁচিলের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।” এ দিন দুপুর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে পাম্প বসানোর কাজ।