ফাইল চিত্র।
জ্ঞানেশ্বরী প্রতারণার তদন্ত একেবারে শূন্য থেকে শুরু করেছে সিবিআই। শুরু হয়েছে সেই সময়ের ডিএনএ পরীক্ষার তথ্য-তালাশও। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক সূত্রে খবর, শুরুতে ৩৭ জনের দেহ শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। পরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ১৩ জনের দেহ শনাক্ত করা গিয়েছিল। প্রথমবার পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ৮ জনের দেহ। দ্বিতীয় পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ৫ জনের দেহ। জ্ঞানেশ্বরী প্রতারণা কাণ্ডে ধৃত অমৃতাভ চৌধুরীর দেহ শনাক্ত হয়েছিল প্রথম পরীক্ষাতেই।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি ওই রেল দুর্ঘটনায় মৃতদের ‘ডিএনএ প্রোফাইলিং’ সম্পর্কে জানতে মেদিনীপুর মেডিক্যালকে চিঠি দিয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশন। মেডিক্যাল তা জানিয়েওছে। অবশ্য দু’তরফই বিষয়টি স্বীকার করেনি। রেলের খড়্গপুরের চিফ মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট সুশীলকুমার বেহেরার দাবি, এমন কিছু জানতে চাওয়া হয়নি। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডুও বলেন, ‘‘ডাক-ফাইল আমি নিজেই দেখি। সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনও চিঠি এসেছে বলে মনে পড়ছে না।’’ হাসপাতালের সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজারও বক্তব্য, ‘‘এমন চিঠির ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’’ চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি মেদিনীপুর মেডিক্যালের ফরেন্সিকের বিভাগীয় প্রধান উদয় বসু রায়চৌধুরীর সঙ্গে। তবে সূত্রের খবর, ই-মেল নয়, চিঠি এসেছিল মুখবন্ধ খামে। জবাবও দেওয়া হয়েছে মুখবন্ধ খামেই। হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘একটি মুখবন্ধ খাম এসেছিল বলে শুনেছি। কিছু তথ্য না কি জানতে চাওয়া হয়েছিল।’’
গত জুনেই জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে মৃতদের একজন জীবিত বলে জানা যায়। অমৃতাভ চৌধুরী নামে ওই ব্যক্তি ডিএনএ-র জাল রিপোর্ট জমা দিয়ে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও বোন মহুয়া পাঠকের চাকরি করে নেয়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ভিজিল্যান্স দফতরে কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়তেই গোটা বিষয়টি সামনে এসেছে। সিবিআই তদন্ত করছে। গ্রেফতার হয়েছে অমৃতাভ।
২০১০ সালের ২৮ মে ঝাড়গ্রামের সর্ডিহার রাজাবাঁধে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন মারা গিয়েছিলেন। মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্ত হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যালের মর্গে। জ্ঞানেশ্বরী প্রতারণা কাণ্ড সামনে আসার পরে পুরনো নথিপত্র খতিয়ে দেখেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। এখন মেদিনীপুর মেডিক্যালে কোনও দেহ বা দেহাংশ সংরক্ষিত নেই। অশনাক্ত দেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল কলকাতার তিন হাসপাতালের মর্গে। অমৃতাভের ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট মিলল কী করে, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
পেরিয়েছে ১১ বছর। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে ২৪ জনের দেহ এখনও শনাক্ত হয়নি। তাঁদের পরিবার মৃত্যুর শংসাপত্রও পায়নি। মৃতদের স্বজনদের আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, ‘‘এই শংসাপত্র পেতে কয়েকটি পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।’’