প্রতীকী ছবি।
জেলার সরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রসবোত্তর বিশেষ নজরদারি চালু রয়েছে। বিশেষ ইউনিটও গঠন করা হয়েছে। তাও সে ভাবে কমানো যাচ্ছে না প্রসূতি মৃত্যু। ছবিটা পশ্চিম মেদিনীপুরের। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর— এই ছ’মাসে জেলায় ২৬ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, মাসে গড়ে ৪ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের অবশ্য দাবি, প্রসূতি মৃত্যু কমছে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলায় ৬৪ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল। অর্থাৎ, মাসে গড়ে ৫ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল। কম সময়ে মাসিক গড় মৃত্যু সংখ্যা ৫ থেকে কমে ৪ হয়েছে। জেলার সরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রসবোত্তর বিশেষ নজরদারি চালু থাকার ফলেই মৃত্যু কমানো সম্ভব হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘প্রসবকালীন মৃত্যু কমাতে ধারাবাহিকভাবে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তার জেরে প্রসূতি মৃত্যু কমছেও। সেটি আরও কমিয়ে আনার সব রকম চেষ্টা চলছে।’’ কমানোর ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে বলেও ওই সূত্রে খবর। সম্প্রতি জেলায় এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা হয়। বৈঠকে ছিলেন জেলাশাসক আয়েষা রানি, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পিনাকীরঞ্জন প্রধান প্রমুখ। ক’দিন আগেই কেশপুরে গিয়েছিলেন জেলাশাসক। সেখানে ব্লকস্তরীয় ‘সেনসিটাইজেশন মিটিং’ ছিল। সেই বৈঠকেও এ নিয়ে পর্যালোচনা হয়। প্রসূতিদের নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করানোর উপর জোর দেওয়ার নির্দেশ দেন জেলাশাসক।
জেলায় এখনও বাড়িতে প্রসব হয়। আগের থেকে অনেক কমলেও এতে এখনও পুরোপুরি ছেদ পড়েনি। অথচ, জেলায় সরকারি ‘ডেলিভারি পয়েন্ট’ কম নেই। রয়েছে সবমিলিয়ে ৩৯টি। জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৯৯.৯৪ শতাংশ। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১- ’২২ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৫৪,২৭৪টি শিশু জন্মেছে। এরমধ্যে ৫৪,২৩৯টি শিশু জন্মেছে হাসপাতালে। বাকি বাড়িতে। ২০২২- এর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর, এই ছ’মাসে জেলায় ২৪,৭৪২টি শিশু জন্মেছে। এরমধ্যে ২৪,৭২৭টি শিশু জন্মেছে হাসপাতালে। বাকি বাড়িতে। অর্থাৎ, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫ জন শিশু জন্মেছে বাড়িতে। জানা যাচ্ছে, চন্দ্রকোনা- ২, দাসপুর- ১, গড়বেতা- ১, ঘাটাল, খড়্গপুর- ১, খড়্গপুর- ২, মোহনপুর, শালবনি প্রভৃতি ব্লকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার এখনও একশো শতাংশ ছোঁয়নি। শালবনিতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৯৯.১৩ শতাংশ, মোহনপুরে ৯৯.৬৪ শতাংশ, খড়্গপুর- ১ এ ৯৯.৬১ শতাংশ, খড়্গপুর- ২ এ ৯৮.৫১ শতাংশ, ঘাটালে ৯৮.৯৬ শতাংশ, গড়বেতা- ১ এ ৯৯.৪৬ শতাংশ, দাসপুর- ১ এ ৯৮.০৪ শতাংশ, চন্দ্রকোনা- ২ এ ৯৯.৫৯ শতাংশ।
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার দাবি, প্রসবকালীন মৃত্যুর হার বিশ্লেষণ করা হয় নিয়মিতই। প্রসবের পরে অন্তত ১২ ঘন্টা প্রসূতির অবস্থার উপরে বিশেষ নজরও রাখা হচ্ছে। দেখা গিয়েছে, স্বাভাবিক প্রসব ও সিজার দুই ক্ষেত্রেই প্রসবের পরে খিঁচুনি, মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, আচমকা উচ্চ রক্তচাপ, সেপসিসের কারণে মারা যাচ্ছেন মা। প্রসবকালীন মৃত্যুর হার বা এমএমআর (ম্যাটারনাল মর্টালিটি রেসিয়ো) দেশের সামগ্রিক হারের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে বেশি। জেলার ওই স্বাস্থ্যকর্তার দাবি, মৃত্যু এড়াতে অযথা সিজার না করে স্বাভাবিক প্রসবে জোর দেওয়া হচ্ছে। মাতৃযানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অযৌক্তিকভাবে এবং দেরিতে করা রেফার বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর মতে, ‘‘অনেক সময়ে চেষ্টা করেও খিঁচুনি ওঠা প্রসূতিকে বাঁচানো যায় না।’’ লেবার রুমের অপরিচ্ছন্নতাও তো একটা সমস্যা? জেলার ওই স্বাস্থ্যকর্তার দাবি, ‘‘লেবার রুম যাতে পরিষ্কার থাকে তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। জেলায় প্রতিটি মৃত্যু নিয়ে পর্যালোচনা হয়। বছরের হিসেবে দেখা গেলে, ফি বছরই কিন্তু প্রসূতি মৃত্যু কমছে।’’