ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। —ফাইল চিত্র।
প্রতিবার ভোট এলেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে শুরু হয় চর্চা। এ বারও তার ব্যতিক্রম নয়। ইতিমধ্যে সরকার ঘোষণা করেছে, কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে রাজ্যই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত করবে। সূত্রের খবর, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে নদী ‘ড্রেজিং’য়ের দায়িত্ব রাজ্য সরকার দিয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন’কে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, ড্রেজিংয়ের ফলে যে পরিমাণ বালি ও মাটি উঠবে, সেই বালি ও মাটি বিক্রি কি কর্পোরেশন আদৌ বিক্রি করতে পারবে? কেন্দ্রীয় সংস্থার রিপোর্ট বলছে, ওই বালি ও মাটি মজুত করতে গেলে বিপুল জমি স্থায়ী ও সাময়িক ভাবে অধিগ্রহণ করতে হবে। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পর এই ঝুঁকি কি আদৌ নেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার? উঠছে প্রশ্ন!
ঘাটাল-সহ দুই মেদিনীপুরের মানুষকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশে ১৯৭৯ সালে তৎকালীন বাম সরকারের সেচ দফতর ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান মঞ্জুর করে। বরাদ্দ করা হয় ৪৯ কোটি টাকা। ১৯৮২ সালে তৎকালীন সেচমন্ত্রী প্রভাস রায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের শিলান্যাসও করেন। কিন্তু তারপর নানা জটিলতা কাজ এগোয়নি। ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার কনসালটেন্সি সার্ভিসেস’ ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেই রিপোর্টে সংস্থাটি জানায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত করতে গেলে শিলাবতী, ওল্ড কাঁসাই, পলাশপাই, দূর্বাচাটি, কংসাবতী এবং নিউ কাঁসাই অববাহিকায় মোট তিন হাজার ৫০০ হেক্টর জমি স্থায়ী ভাবে অধিগ্রহণ করতে হবে। আর অস্থায়ী ভাবে অধিগ্রহণ করতে হবে ন’হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমি। সেতু নির্মাণ এবং নদী চওড়া করতে দরকার স্থায়ী অধিগ্রহণ। আর অস্থায়ী জমি দরকার নদী সংস্কারের বালি, মাটি মজুত করা, কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ইত্যাদি রাখা এবং শ্রমিকদের তাঁবু তৈরির জন্য।
অন্য দিকে, সিঙ্গুর আন্দোলনকে হাতিয়ার করে ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ক্ষমতায় আসার পর রাজ্য সরকার নিজস্ব জমি নীতি তৈরি করে। সেই নীতি অনুযায়ী জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। টাকার অভাব এবং জমি জট এই দুই সমস্যার কারণে রাজ্য সরকার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন’কে দিয়ে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ করাতে চাইছে। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পের জন্য এক দিকে যেমন রাজ্য সরকারকে টাকা খরচ করতে হবে না। অন্য দিকে, বালি ও মাটি বিক্রি করে রাজ্যের কোষাগারে অর্থ আসবে। কিন্তু এতেও দেখা দিয়েছে ধন্দ!
তিন বছর আগে কেলেঘাই নদীর ২২ কিলোমিটার অংশ সংস্কার করার উদ্যোগ করে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন’। কেলেঘাই সংস্কারের কাজে কোনও ঠিকাদার অংশ না নেওয়ায় কর্পোরেশন প্রকল্পটি সেচ দফতরের কাছে ফিরিয়ে দেয়। নদী সংস্কারের বিপুল পরিমাণ বালি ও মাটি দ্রুত বিক্রি না হলে ঠিকাদার সেগুলি কোথায় মজুত করবেন? সেই কারণেই কেলেঘাই সংস্কারের কাজে কোনও ঠিকাদার অংশ নেননি বলে জানা গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের মতো বড় মাপের কাজ করার ক্ষেত্রেও রয়েছে একই সমস্যা।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘মাস্টার প্ল্যানের মতো বড় মাপের কাজ করতে গেলে সেচ দফতরকে সাময়িক জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে রাজ্যকে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’’ এই প্রসঙ্গে রাজ্যের সেচ সচিব সঞ্জীব কুণ্ডু বলেন, ‘‘দায়িত্ব ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশনকে দেওয়া হবে। তবে জমি সংক্রান্ত সমস্যার ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’’