লক্ষ্যভেদ: মেদিনীপুর রাইফেল ক্লাবে ডিসেম্বর মাসে রাজ্যস্তরের এক প্রতিযোগিতায় দিবাকর জানা। ফাইল চিত্র
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের পর তৎকালীন জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন। তার পর নোনাকুড়ি বাজারে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূল যুব কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পর পর এমন কীর্তির জেরে রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দল থেকেও সাসপেন্ড করা হয় দিবাকরকে। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের মুখে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয় তাঁকে।
কিন্তু তাতে শিক্ষা না নিয়ে নিজের দাপট বজায় রেখেছিলেন তিনি। যা পছন্দ হয়নি তৃণমূল নেতৃত্বের। পরিণামে কেটিটিপি মেলার আয়োজক কমিটি থেকে দিবাকরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর এতেই বেজায় চটে যান দিবাকর। সাসপেনশন হওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই দলের একাংশের কাছে তাঁর প্রভাব কমেছিল। তার উপর মেলা থেকে বাদ পড়ায় সেই কর্তৃত্ব আরও আলগা হয়ে পড়ে। তাই নিজের দাপট, কর্তৃত্ব বজায় রাখতে মরিয়া ছিলেন দিবাকর। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঘটনা তার প্রমাণ বলে মনে করছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনেকে।
কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অফিসার সিদ্ধার্থ ঘোষকে মারধরের ঘটনায় শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর জানার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার রাতেই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনের নির্দেশে দিবাকরকে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র জাতীয়তাবাদী ঠিকা মজদুর ইউনিউয়নের কার্যকরী সভাপতির পদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সাসপেন্ড করা হয়েছে তৃণমূল থেকেও। সাসপেন্ড করা হয়েছে দিবাকরের অনুগামী বলে পরিচিত শান্তিপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান সেলিম আলিকেও। ভেঙে দেওয়া হয়েছে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওই সংগঠনের কমিটিও। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত থেকেই খোঁজ নেই দিবাকরের। বন্ধ তাঁর মোবাইল ফোনও।
মেলার আয়োজক কমিটি থেকে বাদ পড়ার পরেও ‘সংযত’ হননি দিবাকর। বরং মেলার কমিটিতে ঠাঁই না হওয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যত বেপরোয়া হয়ে ওঠেন দিবাকর। শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি না দিয়ে বিপুল টাকা খরচ করে মেলার আয়োজন করার অভিযোগ তুলে শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলনও করেন তিনি। গত এক মাসে একাধিক বার দিবাকরকে ঠিকা শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করতে দেখা যায় গিয়েছে। এমনকী আগামী সোমবার থেকেও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল বলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে।
নিজের দাপটকে কাজে লাগিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এক হাজার লরি পরিত্যক্ত ছাই-পাথর এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়নে লাগানোর জন্য নিয়েছিলেন দিবাকর। কিন্তু তা রাস্তাঘাটের কাজে লাগানো হয়নি বলে অভিযোগ তুলে রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরে দিবাকরের বিরুদ্ধে নালিশ জানান তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মন। দলীয়ভাবে পদের সুবিধা নিয়ে বিপুল সম্পত্তি বৃদ্ধির অভিযোগও উঠেছিল দিবাকরের বিরুদ্ধে। দলীয় নেতৃত্ব ভেবেছিলেন একবার সাসপেন্ড হওয়ায় এবং কেটিটিপি মেলা থেকে বাদ পড়ায় হয়তো এলাকায় সমঝে চলবেন দিবাকর। কিন্তু তা হিতে বিপরীত হয়। উল্টে দিবাকরকে নিয়ে আরও অস্বস্তি বাড়ে দলে। দলের নেতা-কর্মীরা তাঁকে নিয়ে অসন্তোষ জানান দলীয় নেতৃত্বের কাছে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন নেতৃত্বও। সেই ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দেয় কোলাঘাটের ঘটনা। পরিণামে ফের সাসপেন্ড দিবাকর। তবে অভিযুক্ত হলেও পুলিশ এখনও নাগাল পায়নি দিবাকরের। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের কর্মপদ্ধতি নিয়ে শুক্রবার ব্লক নেতৃত্বের তরফে বৈঠক করা হয়। জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী দিবাকরের এ হেন কাণ্ডে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘‘এটা অন্যায়, অপরাধ।’’
কিন্তু একবার সাসপেন্ড হয়েও যাঁর এমন সব কীর্তি, যাঁকে দলে ফিরিয়েও নেওয়া হয়েছিল, ফের সাসপেন্ড করে তাঁকে কতটা বেকায়দায় ফেলা যাবে তা নিয়ে যেমন সন্দেহ রয়েছে দলের একাংশে। তেমনই এলাকাতেও।