সোমবার পর্যটকদের উদ্ধার করছেন রতন দাস। —নিজস্ব চিত্র।
পেরিয়ে গিয়েছে এক দশকেরও বেশি সময়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি মতো পুলিশের চাকরি জোটেনি। তাতে অবশ্য দমে নেই রতন। পর্যটকদের বাঁচাতে দিঘার সৈকতে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটছেন রোজ। গত এক সপ্তাহে দু’টি দুর্ঘটনার হাত থেকে প্রাণে বাঁচিয়েছেন পাঁচ পর্যটককেও।
সোমবার বিকেলে ওল্ড দিঘার ২ নম্বর ব্লু ভিউ ঘাটে বেশ কয়েকজন পর্যটক স্নান করছিলেন। জোয়ারের ঢেউয়ে এবং পাথরের খাঁজে আটকে পড়েন এক শিশু-সহ মহিলা পর্যটক। বিষয়টি নজরে আসতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন রতন। উদ্ধার করেন দুই পর্যটককে। একই রকম ভাবেও গত সপ্তাহে তিনজন পর্যটক তলিয়ে যাওয়া থেকে তিনি রক্ষা করেছেন।
রতন দাস। বাড়ি রামনগর-১ ব্লকের অলঙ্কারপুর গ্রামে। ২০১০ সাল থেকে পেশায় নুলিয়া। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সমুদ্র থেকে দক্ষিণ ভারতের দুই পর্যটক দিনকর বাবু এবং দিবাকর রাওয়ের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন রতন। সে জন্য ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর ব্যারাকপুরে এক অনুষ্ঠানে রতনকে সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তখনই তাঁকে পুলিশে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। রতন জানান, নুলিয়া হিসেবেও মজুরি বাড়ানো হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী সেদিন তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর পরে এক দশকের বেশি সময় কেটে গেলেও চাকরি হয়নি রতনের।
২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’দিনের সফরেরর সময় দিঘায় বার কয়েক দেখা করার চেষ্টা করেন রতন। তবে তাঁকে কাছে ভিড়তেই দেওয়া হয়নি। ফলে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দেওয়ার সুযোগই পাননি রতন। সে সময় নুলিয়াদের সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী কোনও খোঁজ না নেওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তাঁর সহকর্মীরাও।
আগে মাত্র দু’হাজার টাকা দেওয়া হত রতনদের। পরবর্তীকালে সেই বেতন বেড়েছে ১৫ হাজার পর্যন্ত। তবে ওই বেতনে সাত জনের পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে বলে দাবি রতনের। একই রকম ভাবে অর্থাভাবে দিন কাটছে সঞ্জয় শীট নামে আরেক নুলিয়ার পরিবারের। পর্যটককে প্রাণে বাঁচাতে গিয়ে কয়েক বছর আগে বুকে আঘাত পেয়ে মারা যান তিনি। সঞ্জয়ের বিধবা স্ত্রীয়ের দাবি, ‘‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিকল্প কাজের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিছুই হয়নি।’’
এর পরেও নুলিয়ার কাজ ছাড়েননি রতন বা তাঁর সহকর্মীরা। সোমবার বিকেলে দুই পর্যটকের জীবন বাঁচানোর পর রতনের গলায় এসেছে অভিমানের সুর। তিনি বলছেন, ‘‘বেতন বেড়েছে ঠিক। তবে পুলিশের চাকরি হয়নি। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের জীবন বাঁচাতে হয়। নুলিয়াদের জন্য সরকারের ভাবনা চিন্তা করা দরকার।’’ এ বিষয়ে দিঘা- শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী আধিকারিক তথা কাঁথির মহকুমা শাসক শৌভিক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে নুলিয়াদের বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া নুলিয়াদের বিষয়ে সরকার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কী কী করা যায়, সেই ভাবনাচিন্তাও করছে।’’