জমে আছে নিকাশির জল। কাঁথি শহরে ক্যালটেক্স মোড়ে। নিজস্ব চিত্র
জেলার দুই মহকুমা শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে।
হলদিয়া পুর এলাকায় ইতিমধ্যেই অনন্ত ৩৮ জনেক ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে শহরবাসীর। যদিও ডেঙ্গি প্রতিরোধে একাঝিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে পুরসভার দাবি। হলদিয়া পুর প্রশাসক জানান, ডেঙ্গি প্রতিরোধে সতর্ক প্রশাসন। নির্দিষ্ট গাইড লাইন মেনেই কাজ করা হচ্ছে। পুরসভা সুত্রে খবর, শিল্পশহরে বহু মানুষ বাইরে থেকে আসেন। সে ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়াতে তিনটি মনিটারিং টিম তৈরি করা হয়েছে বলে জানান পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক তাপস মুখোপাধ্যায়।
পুরসভার সাফাই কর্মীদের অভিযোগ, হলদিয়া টাউনশিপ, দুর্গাচক এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট বাড়ি রয়েছে। সেই সব ফ্ল্যাট বাড়ির গ্যারাজে জলে জমে থাকে। তা লছাড়া অনেকের ছাদে বাগান থাকলেও তার নিয়মিত পরিচর্যা হয় না। সাফাই কর্মীরাও সেইসব জায়গায় যেতে পারছেন না। ফলে ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে ফ্ল্যাটবাড়িতেও পুরসভার তরফে বিভিন্ন আবাসনের কর্তৃপক্ষ বা সোসাইটিকে নজরদারি চালাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
কাঁথি পুরসভার চিত্রটাও খুব বেশি আলাদৈ নয়। পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, ২০২২ সালের জানুয়ারির গোড়া থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যম্ত শহরে ডেঙ্গি আক্রান্ত ছিল না। অথচ নভেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় গুণ। ডেঙ্গির চরম পর্যায় হিসাবে জুলাই-অগস্ট থেকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়। সেই হিসাব অনুযায়ী আশঙ্কা, এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গির যে প্রকোপ দেখা গিয়েছে, তা সামান্য মাত্র। পুরসভার ঢিলেঢালা মনোভাব অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর।
যদিও ডেঙ্গি নিয়ে প্রশাসনিক নির্দেশ-সতর্কবার্তার অভাব নেই। চলছে ডেঙ্গি রোধে কর্মসূচি রূপায়ণে পুরসভার ঘন ঘন বৈঠক। কিন্তু অভাব রয়েছে সেই কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা তৈরি, মাঠে নেমে কাজের সদিচ্ছার ক্ষেত্রে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নামমাত্র ব্লিচিং পাউডার আর কীটনাশক তরল ছড়িয়ে দায়িত্ব সেরে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
কাঁথি পুরসভা এলাকায় মোট ২১টি ওয়ার্ড। গত কয়েকদিনে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন শহরের ৬ জন। এঁদের মধ্যে পাঁচজন কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অজানা জ্বরেও চিকিৎসাধীন রয়েছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কোথাও জল জমে থাকলে কিংবা ঝোপঝাড়, জঙ্গল থাকলে সেই খবর নিয়েও তাঁরা পৌঁছে দিচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষের কাছে। যদিও পুরবাসীর অভিযোগ, ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভার ভূমিকা হতাশজনক। ওয়ার্ডগুলিতে ঠিকমতো কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে না।
যদিও পুরসভার দাবি, এ বছর ডেঙ্গি মোকাবিলায় জন্য রাজ্য থেকে ৪২টি স্প্রে মেশিন পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ২১টি মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ডেঙ্গি মোকাবিলায় সদর্থক এবং গুরুতপূর্ণ পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়ে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান পুরসভার কাউন্সিলর তথা দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপ দাস। কাঁথি পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের নোডাল আধিকারিক অনুতোষ পট্টনায়ক বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। শহরবাসীকে ডেঙ্গি সম্পর্কে সতর্ক এবং সচেতন করতে নানাভাবে প্রচার চলছে। পুর কর্তৃপক্ষকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।’’
পুরপ্রধান ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘‘সমস্ত ওয়ার্ডে মাইকিং করে প্রচার চলছে। ডেঙ্গি বিরোধী অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে ঠিকই। তবে শহর জুড়ে গাপ্পি মাছ ছাড়া, আবর্জনা পরিষ্কার এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজ নিয়মিত চলছে।’’