তৎপর: মশা-দমন। ঘাটালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
শনিবার ছিল জাতীয় ডেঙ্গি দিবস। করোনা আবহেও দিনটি পালিত হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রতিটি ব্লক এবং শহরে। আগেই জেলার নির্দেশ পৌঁছেছিল সব ব্লক এবং শহরে। সেই মতো সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনেই সচেতনতা কর্মসূচি হয়েছে। প্রচারগাড়ি ঘুরেছে। মানুষজনকে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতন করা হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘জেলার সর্বত্র ডেঙ্গি দিবস পালিত হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই ব্লক এবং শহরে নানা কর্মসূচি হয়েছে।’’
গত মরসুমেও জেলায় চোখ রাঙিয়েছে ডেঙ্গি। এ বারও আশঙ্কা রয়েছে। গিরীশচন্দ্র মানছেন, ‘‘গত মরসুমে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছিল। তবে এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। আক্রান্তরা প্রায় সকলেই সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘গত মরসুমে জেলায় ডেঙ্গিতে কারও মৃত্যু হয়নি। আর এ বার এখনও ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’ জানা যাচ্ছে, গত পাঁচটি মরসুমের মধ্যে গত মরসুমেই জেলায় রেকর্ড সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সংখ্যাটা ছিল প্রায় হাজার ছুঁইছুঁই। এখন ফের বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজ শুরু হচ্ছে।
ডেঙ্গির দাপট
• ২০১৫ ৯৮
• ২০১৬ ৫৭১
• ২০১৭ ৬৪১
• ২০১৮ ৮০৩
• ২০১৯ ৯৭৮
• ২০২০ ১৫
(পশ্চিম মেদিনীপুরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা, তথ্য: জেলা স্বাস্থ্যভবনের এক সূত্রে, ২০২০- র পরিসংখ্যান ১৫ মে পর্যন্ত)
রোগ রুখতে
• সামান্যতম জমা জলেও মশা জন্মায়, তাই খোলা পাত্রে জল জমতে দেবেন না
• হাত-পা ঢাকা পোশাক পরুন
• মশারির মধ্যে ঘুমোন
• নিজের বাড়ি ও এলাকার পরিবেশ সর্বদা জঞ্জালমুক্ত রাখুন
শনিবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক ফ্লেক্স চোখে পড়েছে। ফ্লেক্সে বার্তা রয়েছে, ‘ডেঙ্গি প্রতিরোধ শুরু হোক আপনার থেকেই’। কর্মসূচি থেকে নির্দিষ্ট কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০১৮ সালে ৮০৩ জন ও ২০১৯ সালে ৯৭৮ জন। এক সূত্রের খবর, এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গি নির্ণয় হয়েছিল ৬০৪ জনের। বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গি নির্ণয় হয়েছিল ৩৭৪ জনের। চলতি মরসুমেও জেলায় ডেঙ্গি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৫। এরমধ্যে ডেবরায় ৪ জন, খড়্গপুর গ্রামীণে ৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। খড়্গপুর শহর, মেদিনীপুর শহর, নারায়ণগড়, সবং, গোয়ালতোড়, কেশপুরেও ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। ফলে, এই মরসুমেও ডেঙ্গির চোখ রাঙানোর আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যাচ্ছে, জেলার সাতটি পুরসভার মধ্যে গত মরসুমে সবথেকে বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মেলে খড়্গপুরেই, ১৩৭ জন। মেদিনীপুরে ৫২ জন। ঘাটালে ৭ জন। অন্যদিকে, জেলার ২১টি ব্লকের মধ্যে সবথেকে বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মেলে ডেবরায়, ২১৫ জন। খড়্গপুর- ১ এ ৪৭ জন, খড়্গপুর- ২ এ ২৬ জন। জেলার স্বাস্থ্যভবনের পর্যবেক্ষণ, এডিস এলবোপিক্টাস প্রজাতির মশা শহরাঞ্চলে বেড়েছে। এই প্রজাতির অল্প শীতেও বেঁচে থাকে। এবং জীবনচক্র সম্পন্ন করে। জেলায় নতুন করে কয়েকটি এলাকায় ডেঙ্গির প্রবণতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য জানাচ্ছেন, ওই এলাকাগুলিতে সচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। মশার লার্ভা নিধন, জঞ্জাল সাফাই, বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘ডেঙ্গি প্রতিরোধ নির্ভর করে জীবাণুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণ ও তার কামড় থেকে বাঁচার উপরে। মশা নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক পদ্ধতি হল, এর বৃদ্ধির পরিবেশকে ধ্বংস করা। ডেঙ্গি মশা সাধারণত স্থির ও পরিস্কার জলে ডিম পাড়ে। তাই বাড়ির চারপাশে যাতে কোনও জায়গায় জল না জমে থাকে তা দেখতে হবে। বাড়ির আশেপাশে ভাঙা পাত্র, নর্দমা বা ডোবাতে জল জমতে না দেওয়া ও পরিস্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। শরীর পোশাকে ঢেকে রাখা, ঘুমানোর সময়ে মশারি ব্যবহার করার উপরে জোর দিতে হবে।’’ তাঁর দাবি, পুরসভা এবং ব্লকগুলির সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনামাফিক রোগ প্রতিরোধের কাজ শুরু হয়েছে।