নোটের সমস্যার প্রভাব পড়েছে ঐতিহ্যপ্রাচীন কনকদুর্গা মন্দির চত্বরেও। ভরা পর্যটনের মরসুম, অথচ মাছি তাড়াচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অন্যন্য বছর উত্তুরে বাতাস বইতে শুরু করলেই তিল ধারণের জায়গা থাকে না। প্রাচীন মন্দির ও দুষ্প্রাপ্য গাছগাছড়ার জঙ্গল দেখার জন্য শয়ে শয়ে পর্যটকরা ভিড় করেন। এ বার ছবিটা একেবারেই অন্য রকম। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, নোট সমস্যার জন্য লোকজন কম আসছেন। ব্যবসায় ভীষণই মন্দা যাচ্ছে।
জামবনি ব্লকের চিল্কিগড়ে ডুলুং নদীর কূল ঘেঁষা প্রাচীন গাছগাছড়ার গভীর জঙ্গলের মাঝে রয়েছে কনকদুর্গার প্রাচীন মন্দির। এ ছাড়া কনকদুর্গার মন্দিরের পাশেই রয়েছে প্রায় তিনশো বছরের পুরনো একটি পরিত্যক্ত বিষ্ণু মন্দির। কনকদুর্গার মন্দির চত্বরে রয়েছে শিশুদের বিনোদনের নানা আয়োজন। মন্দির চত্বরে পুজোর সামগ্রী ও খাবার দাবারের দোকানও রয়েছে। সারা বছরই কনকদুর্গা মন্দির চত্বরে পর্যটকরা আসেন। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকে লোকজন আসেন। মন্দিরে বিগ্রহের সামনে বিয়ের অনুষ্ঠানও হয়।
চিল্কিগড় মন্দির চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, চারদিক ফাঁকা। হাতে গোনা কয়েকজন বেড়াতে এসেছেন। বেশির ভাগই ঝাড়গ্রাম ও আশেপাশের এলাকা থেকে এসেছেন। এক-দু’জন কলকাতার পর্যটকও রয়েছেন। ঝাড়গ্রাম শহরের কলেজ পড়ুয়া বুদ্ধদেব বেরা বলেন, “প্রায়ই আসি। কিন্তু এমন খাঁ-খাঁ চত্বর আগে দেখিনি।” বিজয়গড়ের শীলা সেন, নিউ টাউনের প্রভুদান মজুমদার বলেন, “চিল্কিগড়ের মন্দির, নদী ও জঙ্গলের টানে এসেছি। কিন্তু স্থানীয় দোকানগুলিতে একশো টাকারও খুচরো পাওয়া যাচ্ছে না।”
মন্দির চত্বরে খাবার একটি দোকানের কর্ত্রী সুমিত্রা রানা বলেন, “লোকজন এলে তবে তো বিক্রিবাটা হবে। টাকার বিনিময় হবে। গত চার সপ্তাহ ধরে তেমন লোকজনই তো হচ্ছে না। প্রত্যন্ত জঙ্গল এলাকায় কোথায় খুচরো করাবো? তাও যাঁরা আসছেন, তাঁদের দশ-কুড়ি টাকার খুচরোয় কেনাকাটা করার অনুরোধ করছি।” মন্দির চত্বরে পুজোর সামগ্রীর দোকানের মালিক স্বপনকুমার সিংহ বলেন, “নোট বাতিলের পর থেকে লোকজন কম আসছেন। বিক্রিবাটায় খুবই মন্দা যাচ্ছে। জানি না কতদিন এভাবে চলবে!”
কনকদুর্গা মন্দিরের পূজারী গৌতম ষড়ঙ্গী বলেন, “শীতের মরশুমে এত কম লোকজন আসার কথা নয়।” চিল্কিগড় জঙ্গলের বাইরে বনভোজনের বিকল্প জায়গা তৈরির কাজ চলছে জোর কদমে। ১ ডিসেম্বর থেকে সেখানে পিকনিক করা যাচ্ছে। পঞ্চাশজন পিছু তিনশো টাকা হারে ফি ধার্য করেছে মন্দির উন্নয়ন কমিটি। কিন্তু পিকনিক পার্টির দেখা নেই। জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা মন্দির উন্নয়ন কমিটির সহ-সভাপতি সমীর ধল বলেন, “নোটের সমস্যার জন্য লোকজন কার্যত আসছেন না। পিকনিক পার্টিরও দেখা নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।”