সেই চিঠি। নিজস্ব চিত্র।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে কুড়মিরা আদিবাসী ছিলেন! খোদ রাজ্য সরকারের তরফে এমন তথ্য জানানো হল কেন্দ্রকে।
কুড়মিদের আদিবাসী তালিভুক্তির দাবিকে মান্যতা দিয়ে ভোটের আগে রাজ্য সরকারের এমন পদক্ষেপের পিছনে অবশ্য রাজনীতি দেখছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির অভিযোগ, ভোটের আগে কুড়মিদের জাতিগত বিষয়টি নিয়ে আখেরে রাজনীতি করতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কুড়মিদের এ রাজ্যের এসটি তালিকাভুক্ত করার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে গত ২০ জানুয়ারি কেন্দ্র সরকারের কাছে প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। ওই প্রস্তাবের সঙ্গে সিআরআই (কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) রিপোর্টও দাখিল করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব পদমর্যাদার ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) সঞ্জয়কুমার থাড়ে কেন্দ্রীয় আদিবাসী মন্ত্রকের সচিব দীপক খান্ডেকরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ১৯০১-১৯১১ সালের আদমসুমারির তথ্যে কুড়মিদের ‘অ্যাবঅরিজিন্যাল ট্রাইব’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। রাজ্যের কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট কুড়মিদের নিয়ে নৃতাত্ত্বিক সমীক্ষা চালিয়ে তাদের মন্তব্যে জানিয়েছে, ‘টোটেমিক কুড়মিদের সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে আদিবাসিত্বের ছাপ রয়েছে’।
এ রাজ্যের ১২টি জেলায় প্রায় ২০ লক্ষ কুড়মি বসবাস করেন। কুড়মিদের ভাষা কুড়মালিকে রাজ্য সরকার দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। কুড়মিদের পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে রাজ্য ক্যাবিনেটেও সর্বসম্মত সুপারিশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে অনুরোধ করেছেন। কুড়মিদের পশ্চিমঙ্গের আদিবাসী তালিকাভুক্ত করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার অনুরোধ করেছেন থাড়ে।
চিঠিতে থাড়ে আরও জানিয়েছেন, বহুদিন ধরে সারা দেশের কুড়মিরা আদিবাসী তালিকাভুক্তির দাবি জানিয়ে আসছেন। এ রাজ্যের একাধিক কুড়মি সংগঠন পঞ্চাশের দশক থেকে আদিবাসী তালিকাভুক্তির দাবি জানিয়ে চলেছে। কুড়মিদের একাধিক সংগঠনের আন্দোলনের জেরে ২০১৭ সালে রাজ্যের তরফে প্রথমবার কেন্দ্রের কাছে কুড়মিদের আদিবাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ে রাজ্যের দাখিল করা সিআরআই রিপোর্টে কেন্দ্র সন্তুষ্ট হয়নি। রাজ্যের প্রস্তাব খারিজ করেছিল কেন্দ্র।
গত বছর থেকে ফের কুড়মিদের দাবি নিয়ে সরব হয় একাধিক কুড়মি সংগঠন। কুড়মিদের চারটি সামাজিক সংগঠন মিলিত ভাবে ‘কুড়মি সমন্বয় মঞ্চ’ গড়ে আন্দোলন শুরু করে। গত বছর ডিসেম্বরে ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের দফতরের সামনে ছ’দিন ধরে ধর্না-অনশন হয়। কুড়মিদের দাবি ছিল, রাজ্যের তরফে সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট পাঠিয়ে কেন্দ্র সরকারের কাছে উপযুক্ত প্রস্তাব পাঠানো হোক।
অবশেষে তা হওয়ায় কুড়মি সংগঠনগুলি। কুড়মি সমন্বয় মঞ্চের নেতা রাজেশ মাহাতো বলেন, ‘‘রাজ্যের এই পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানাই। এ বার কেন্দ্র সরকার কী করে সেদিকেই আমরা তাকিয়ে রয়েছি। আশা করব কেন্দ্র এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তবে বিধানসভা ভোটের আগে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের দাবি, ‘‘ভোট আসতেই কুড়মি তাস খেলতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতে কোনও লাভ হবে না। বরং আমরা রাজ্যের ক্ষমতায় এলে কুড়মিরা যোগ্য সম্মান পাবেন।’’ তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো পাল্টা বলছেন, ‘‘কুড়মিদের দাবির প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই সহানুভূতিশীল। রাজ্যের তরফে যথাসম্ভব যা করণীয় তাই করা হয়েছে। আদিবাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি কেন্দ্রের এক্তিয়ারে। কেন্দ্র সরকারই গড়িমসি করায় কুড়মিদের দাবি পূরণ হচ্ছে না।’’