মাথায় ছাতা দিয়ে ডিঙিতে চেপে যাতায়াত করছেন ঘাটাল পুরসভার শ্যামপুরের বাসিন্দারা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
মেদিনীপুর: বন্যা পরিস্থিতির গ্রাসে বিপর্যস্ত ঘাটাল সহ জেলার একাংশের জনজীবন। ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানির ঘটনাও বেড়ে চলেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জনই মারা গিয়েছেন জলে তলিয়ে। পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন দুর্গতেরা।
বিরোধীদেরও অভিযোগ, ত্রাণের কাজে গতি নেই। একাংশ এলাকায় উদ্ধারকারী দলের দেখা মিলছে না বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জলমগ্ন এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। দুর্গতদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। বুধবার ফের বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টি চলতে থাকলে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাড়তে পারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় যাবতীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ বিডিও-দের জলমগ্ন এলাকায় গিয়ে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একাধিক বিডিও-র দাবি, হঠাৎ করেই এলাকা জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতি সচরাচর দেখা যায় না। জেলা প্রশাসনের দাবি, ইতিমধ্যে প্রায় ২২ হাজার ত্রিপল বিলি হয়েছে। আরও পাঠানো হচ্ছে। প্রায় ৬৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। না হলে প্রাণহানির ঘটনা আরও ঘটার আশঙ্কা ছিল।
অনেকে মনে করাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। অতিবৃষ্টি অবশ্য বেশ কয়েকজনের প্রাণ কেড়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, অতিবৃষ্টির সময়কালে কেশপুরে জলে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। গড়বেতায় দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। ঘাটালের রাধানগরে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। দাসপুর ১ এর হরিরাজপুরে জলে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। দাসপুর ২ এর খাকুড়দহে জলে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। চন্দ্রকোনা ১ এর বাঁকায় জলে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। ঘাটাল শহরের আলমগঞ্জে জলে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। ক্ষীরপাইয়ে সর্পদষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ঘাটালে। ঘাটালে এখনও ৪৬টি ত্রাণ শিবির চলছে। শিবিরগুলিতে ৪,৩৩১ জন রয়েছেন। ৪৬,৫৭৮ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। অতিবৃষ্টির জেরে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিপর্যয় ঘিরে রাজনীতি নতুন কিছু নয়। এ ক্ষেত্রেও চাপানউতোর অব্যাহত। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থা আগে থেকে খতিয়ে দেখা উচিত ছিল। সময়োপযোগী পদক্ষেপ করা হয়নি।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘আগে মানুষের জীবন বাঁচানোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। প্রশাসন সেটাই করেছে। দুর্গতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ত্রাণ পৌঁছচ্ছে দ্রুত। জলবন্দি অবস্থাতেও সর্বত্র অনুভূত হচ্ছে সহানুভূতিশীল প্রশাসনের উপস্থিতি।’’ শাসক দলের অনেকের দাবি, জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলেই এটা হয়েছে। জেলার একাংশে বন্যা পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রকেই দায়ী করেছেন জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। মানস বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ডিভিসি- কে অনুরোধ করে বলেছিলেন, যেদিন জল ছাড়বেন, তার দু’দিন আগে জানাবেন। কারণ, প্রস্তুতি নিতে হবে। এ বার প্রথম দিনই ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কিউসেক জল ছেড়ে দিল। তারপরে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার কিউসেক জল ছেড়ে দিল। জানায়নি।’’
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা মানসদের। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সবমিলিয়ে ১২৭টি বোট এবং নৌকা নামানো হয়েছে। বিরোধীরা মনে করাচ্ছে, এখনও কিছু এলাকার মানুষকে ‘এক- মানুষ’ জলের মধ্যে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি হলে নদীগুলিতে জল বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।