ইউনিয়ন রুমে ভর্তির অস্থায়ী কেন্দ্র। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
কলেজের গেটের বাইরে বাসযাত্রীদের প্রতীক্ষালয়। সেখানে ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের ভিড়। জেনারেলে ভর্তির নিয়ম কী? সদ্য ভর্তি হওয়া এক পড়ুয়া মুহূর্তে জবাব দিলেন, “কোনও ক্যানডিডেট আছে? ভিতরে চলে যান। ইউনিয়নের দাদারা সব করে দেবে।” কিন্তু ভর্তি তো অনলাইনে হচ্ছে? এ বার পড়ুয়ার জবাব, “ভিতরে গেলেই সব বুঝবেন।”
ডেবরা শহিদ ক্ষুদিরাম কলেজ গেটের ভিতরে পা ফেলতেই টের পাওয়া গেল ‘ইউনিয়নের দাদা’দের দাপট। অফলাইনে ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে পড়ুয়াদের একজন বললেন, “মেধা তালিকায় নাম থাকলে ইউনিয়নের দাদাদের ভর্তির ফি-র সঙ্গে কিছু টাকা দিলেই হচ্ছে। কিন্তু এখন অফলাইনে ভর্তির বন্দোবস্ত করতে তো দাদারা বেশি টাকা নেবে।” কেমন? এক ছাত্রের জবাব, “আমি যেমন অফলাইনে ভর্তির জন্য সব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি দাদাদের কাছে। শুনছি জেনারেলে ১৬৫০ টাকার বদলে সাড়ে তিন হাজার পর্যন্ত নিচ্ছে।’’ তিনি জানালেন, অনার্সে বিষয় অনুযায়ী ‘রেট’ ঠিক হচ্ছে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দাদাদের আলাপ আছে। তাই মাকি বলেছে, একটা ৮৫০ টাকা দামের মদের বোতল দিলেই হবে।
ইউনিয়ন রুমে গেলে সুমনদা, সমীরদা ‘একটু কমে’ করে দেবেন বলেও আশ্বাস দিলেন কেউ কেউ। ইউনিয়ন রুমের পথে দেখা পিংলার জামনা থেকে আসা এক ছাত্রীর বাবা সুনীল দে-র সঙ্গে। তিনিও বললেন, “কলেজের লোকেরা বলল টাকা জমা করতে ইউনিয়ন রুমে যেতে।”
আরও পড়ুন: তোলাবাজি ভর্তিতে, গ্রেফতার এবিভিপি সদস্যও
ছাত্র সংসদ কার্যালয়ের পাশেই একটি ক্লাসরুমে তিনটি ল্যাপটপ নিয়ে কার্যত অস্থায়ী ভর্তিকেন্দ্র খুলে বসেছেন টিএমসিপি-র সদস্যরা। সেখানেই ভিড়ের মাঝে পাওয়া গেল সমীর প্রামাণিককে। সাংবাদিক বুঝতে পেরে সমীর বললেন, “আসলে নতুন যাঁরা আসছে তাঁদের সাহায্য করছি আমরা।” কিন্তু টাকা নেওয়া হচ্ছে কি? সমীরের দাবি, “না, আমরা কোনও টাকা নিচ্ছি না। যাঁরা অনলাইনে টাকা জমা করতে পারেনি আমরা তাঁদের টাকা জমা করে দিচ্ছি।” কিন্তু অফলাইনে ভর্তির জন্য কেন টাকা ও নথি জমা নেওয়া হচ্ছে? এ বার ঢোঁক গিলে সমীর বললেন, “কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই অফলাইনের জন্য ডকুমেন্ট জমা নিচ্ছি। থার্ড লিস্ট বেরনোর পরে আসন ফাঁকা থাকলে অফলাইনে ভর্তি করানো হবে।”
কথাবার্তার মধ্যেই এসে পড়লেন টিএমসিপি-র কলেজ ইউনিটের সভাপতি শুভেন্দু প্রামাণিক। তাঁর দাবি, “দাদা, সব অপপ্রচার চলছে। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার প্রশ্নই নেই। কেউ খুশি হয়ে ৫০-১০০ টাকা মিষ্টি খেতে দিলে আলাদা কথা।” সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, “আসলে আমাদের দলের লোকেরাই আমাদের বিরোধী। ওরাই এ সব রটাচ্ছে।”
ডেবরার এই কলেজে পরিচালন সমিতির সভাপতির পদ নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ বহু দিনের। আগে সভাপতি ছিলেন তৃণমূলের জেলা যুব নেতা প্রদীপ কর। আর্থিক গরমিলের অভিযোগ ওঠায় প্রদীপকে সরিয়ে মহকুমাশাসককে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। গত জানুয়ারিতে ফের পরিচালন সমিতি গড়তে সরকার মনোনীত সভাপতি হিসাবে বিধায়ক সেলিমা খাতুনের নাম পাঠানো হয়। প্রদীপ ঘনিষ্ঠ টিএমসিপি সদস্যরা অনশনে বসে। ভেস্তে যায় গোটা প্রক্রিয়া।
এরই মধ্যে কলেজে ভর্তি নিয়েও দু’পক্ষের আকচাআকচি শুরু হয়েছে। তবে ভর্তিতে দুর্নীতির কথা জানেন না বলেই দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। কলেজের টিচার ইন-চার্জ সুতপা পাল বলেন, “কলেজের মধ্যে পড়ুয়াদের অনলাইনে টাকা জমার ব্যবস্থা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আর অফলাইনে ভর্তির জন্য এ ভাবে নথি জমা নিতে পারে না ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা। আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”