বাড়ি ফিরলেন মনোজ মাইতি
দু'দিন আগে দেহ সৎকার করে ফিরল পরিবার। সেদিনই মৃতের পরিবারের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় মৃত্যুর শংসাপত্র। তার পরে অশৌচ পালন। ৫৩ বছর বয়সে কোভিড আক্রান্ত হয়ে পথ চলা শেষ মনোজ মাইতির। মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। এমনই শোকের মধ্যে দিন চলছিল তাঁদের।
এমন সময়ে শনিবার একটি ফোন আসে ছেলে সুরজিতের কাছে। এ তো তাঁর ‘মৃত’ বাবার গলা! ফোনের ও-পার থেকে শোনা গেল, ‘‘আমি এখন পুরো সুস্থ। বাড়ি ফিরতে চাই।’’ ইহলোক পরলোক সব গুলিয়ে গেল ছেলের। পরিবার সমেত ছুটলেন হাসপাতালে। সৎকার করে আসা বাবা তাঁদের সামনে।
এমনটাই ঘটল পূর্ব মেদিনীপুরের চন্ডীপুরে। তা হলে? কার মৃতদেহ সৎকার করলেন তাঁরা? কী ভাবেই বা এমনটা হল?
হাসপাতালের কর্ণধার পবিত্র জানার সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, শয্যা অদল বদল হয়ে যাওয়ায় এই ভুল হয়েছে। মনোজ মাইতি নন, মারা গিয়েছেন মানস মাইতি। মনোজ পটাশপুর থানার পঁচেট গ্রামের বাসিন্দা। মানস পাঁশকুড়ার। গত ১৭ এপ্রিল রাত ১টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মানস। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৮ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি মনোজ। পরে মনোজের শয্যায় মানসকে আনা হয়। কিন্তু শয্যার পাশে মেডিক্যাল রিপোর্টের ফাইলটা রয়ে যায়। ফলে মানসের মৃত্যু হওয়ার পরে মনোজের ছেলেকে ফোন করে খবর পাঠানো হয়। পবিত্রর কথায় জানা গেল, শনিবার সকালে এক ব্যাক্তি সুস্থ হলে তাঁকে বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়। তিনিই বাড়িতে ফোন করে ছেলেকে খবর দেন। তখনই সবটা স্পষ্ট হয়ে যায়।
পবিত্র জানার কথায়, ‘‘হাসপাতালের সমস্ত শয্যা ভর্তি। রোগী উপচে পড়ছে। এমন অবস্থায় ভুল হয়ে গিয়েছে। গোটা ঘটনা জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে।’’
মনোজ মাইতির ছেলে সুরজিৎ জানিয়েছেন, তিনি এ ঘটনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে চান না। ক্ষুব্ধ হলেও এই আনন্দ মুহূর্তটা আসবে বলে ভাবতে পারেননি। তবে একইসঙ্গে হাসপাতালকে আর্জি জানিয়েছেন, এমন ভুল যেন আর না হয়।