Kharagpur

এত দুর্ভোগের পরেও কুড়মিদের প্রাপ্তি শূন্যই!

পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি সমাজ জাতীয় সড়ক অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেও ১০ঘন্টা অবরোধ শিথিল করার কথা জানান রাজেশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:১৪
Share:

প্রতিবাদে কুড়মি সমাজ।

দাবি তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি পাওয়ার। গত সেপ্টেম্বরে টানা অবরোধ করেও দাবি পূরণ হয়নি। সেই দাবিতে গত কয়েক দিনে কুড়মিদের দুই সংগঠনের পৃথক কর্মসূচিতে ১১০ ঘন্টা পশ্চিম ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৪৬ ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিল কলকাতা-মুম্বই জাতীয় সড়ক। দাবি অবশ্য পূরণ হয়নি। তার আগেই কুড়মি নেতৃত্ব পিছু হটেছেন। এ বার সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনার পালা। কিন্তু এত রেল, জাতীয় সড়কে কোটি-কোটি টাকার ক্ষতির সঙ্গে রেলযাত্রীদের দুর্ভোগের প্রাপ্তি নিয়েই উঠছে প্রশ্ন!

Advertisement

আজ, মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্য সচিবের সঙ্গে কুড়মিদের বৈঠকের আয়োজন হয়েছে। সেই আমন্ত্রণ পাওয়ার পরেই জাতীয় সড়ক অবরোধ শিথিলের কথা জানান পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি সমাজের রাজ্য নেতা রাজেশ মাহাতো। রবিবার একই ভাবে রেল ও সড়ক অবরোধ তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো। তবে পুরুলিয়ার কুস্তাউরে সকালে অবরোধ উঠলেও খেমাশুলিতে অবরোধ চলে। শেষে রাতে যবনিকা পড়ে খেমাশুলির রেল অবরোধেও। রেলপথ ছেড়ে চলে যান কুড়মিরা। দখল নেয় আরপিএফ। পরে কুড়মি প্রতিনিধি এসে রেললাইন থেকে ব্যানার, পতাকা সরিয়ে নেন। এর পরে ওই রেলপথে ট্রেনের চাকা গড়ায়।

পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি সমাজ জাতীয় সড়ক অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেও ১০ঘন্টা অবরোধ শিথিল করার কথা জানান রাজেশ। তবে দাবি পূরণ না হলে অবরোধ চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সেই মতো এ দিন সকাল ৬টা থেকে জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু হয়। তবে ১০টায় অবরোধ পুরোপুরি শিথিলের কথা ঘোষণা করা হয়। বয়ান বদলে এ দিন রাজেশ বলেন, “সরকার পক্ষ সদিচ্ছা দেখিয়েছে। আমাদের মঙ্গলবার নবান্নে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে আমাদের দাবি পূরণ না হলে ফের অবরোধ হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা জাতীয় সড়কে অবরোধ শিথিল করলাম।”

Advertisement

এ দিন থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়েছে খেমাশুলির রেলপথ ও জাতীয় সড়ক। তবে ৪ এপ্রিল থেকে চলা এই অবরোধ-আন্দোলনের প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। চড়া রোদে কাজকর্ম ছেড়ে অবরোধ চালিয়ে গিয়েছেন কুড়মিরা। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবু দাবি মেটেনি। খেমাশুলি সংলগ্ন জঠিয়া গ্রামের এক কুড়মি যুবকের কথায়, “তিন দিন টানা পড়েছিলাম অবরোধে। রোদে অসুস্থ হয়ে পড়ায় দু’দিন যাইনি। সত্যি বলতে এত কষ্ট করেও এখনও নিজেদের তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি আদায় করতে পারলাম না। দেখা যাক বৈঠকে কী হয়!”

আর দুর্ভোগ ও ক্ষতির তালিকা তো দীর্ঘ। এ ক’দিন চরম ভোগান্তি সয়েছেন রেলযাত্রীরা। ব্যাপক প্রভাব পড়েছে রেল, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও শিল্প সংস্থার আয়ে। কোটি-কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। ট্রেনের টিকিট বাতিলে দুর্ভোগে পড়া পুণের একটি কলেজের স্নাতকের ছাত্র খড়্গপুরের প্রেমবাজারের আর্যদীপ দাস বলেন, “ছুটির পরে কলেজ খুলছে। ৮ এপ্রিল আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেসের টিকিট বাতিল হয়। এখন অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তৎকালে ঘুরপথে ভুবনেশ্বর হয়ে পুণের টিকিট পেয়েছি। তাতেও সময়ে যেতে পারব না। এত দুর্ভোগের পরেও কুড়মিরা যদি নিজেদের দাবি আদায় করতে পারতেন, মেনে নিতাম। তা হল কই!” একটি রেলযাত্রী সংগঠনের সভাপতি খড়্গপুরের জয় দত্তও বলছেন, “নিত্যযাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। মুম্বই, পুণের সব ট্রেন বাতিলে বহু ক্যানসার রোগী, পড়ুয়াও বিপাকে পড়েছেন। তার পরেও কুড়মিদের প্রাপ্তি এখনও শূন্য।’’ তাঁর মতে, ‘‘রেল ও রাজ্য প্রশাসনের আগেই কড়া পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল। আসলে এই বিপুল আর্থিক ক্ষতির বোঝা পরোক্ষে আমাদের কাঁধেই তো চাপবে!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement