ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে ফের ক্ষতির শঙ্কায় কৃষকেরা

মরসুমের শুরু থেকেই নাগালের বাইরে ছিল ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, টমেটো, বরবটি, সিম, বেগুন-সহ শীতের নানা প্রজাতির ফসল। একের পর এক ঝড়ঝাপ্টা সামলে স্বাভাবিক হচ্ছিল উৎপাদনও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৪৪
Share:

মেদিনীপুর সদর ব্লকের নেপুরায় নষ্ট হয়েছে ধান। নিজস্ব চিত্র

খামখেয়ালি বৃষ্টির জেরে মরসুমের শুরু থেকেই আনাজের দর ছিল উর্ধ্বমুখী। সেই সঙ্গে দোসর হিসেবে যুক্ত হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের জেরে চলছে বৃষ্টি, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। পর পর দুর্যোগে প্রবল ক্ষতি হয়েছে আনাজের। এরই মধ্যে আলুর দাম ছুঁয়েছে ২৩ টাকা প্রতি কেজি। চন্দ্রমুখির দর তো আরও বেশি। ২৭ টাকা কিলো। দরে পাল্লা দিচ্ছে আনাজও।

Advertisement

মরসুমের শুরু থেকেই নাগালের বাইরে ছিল ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, টমেটো, বরবটি, সিম, বেগুন-সহ শীতের নানা প্রজাতির ফসল। একের পর এক ঝড়ঝাপ্টা সামলে স্বাভাবিক হচ্ছিল উৎপাদনও। নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শীতের আনাজের দাম কমার সম্ভাবনা ছিল। শুক্রবার থেকে আবার বুলবুলের জেরে শুরু হয়েছে তুমুল বৃষ্টি। যার জেরে আনাজ চাষে বড় রকমের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শনিবার ঘাটাল বাজারে গিয়ে দেখা গেল চড়া দামে বিকোচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক-সহ শীতের আনাজ। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি এখনই উন্নতির কোনও সম্ভাবনা নেই।

জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক কুশধ্বজ বাগ বলেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। তার প্রভাব পড়ছে দামেও। বুলবুলের জেরে জেলায় আনাজ চাষে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকছে।” আনাজের দাম বেশি থাকলেও এতদিন আলুর দাম ছিল নাগালের মধ্যেই। হঠাৎ করেই আলুর দর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২-২৫ টাকায়। কদিন আগেও যার দর ছিল ১৬ টাকা। ভুক্তভোগীদের জানালেন, “শীতের আনাজ এখনও সে ভাবে পাতে ওঠেনি। ভেবেছিলাম শীত বাড়লে দাম কমবে। তার মধ্যেই আবার দুর্যোগ! কবে যে সবকিছু স্বাভাবিক হবে?” উদ্যানপালন দফতর সূত্রের খবর, এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আনাজ চাষ হয়েছে। পর পর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। পচে গিয়েছিল আনাজ চারার গোড়া। ধসা রোগে চারাগাছের ডালপালাও নষ্ট হয়েছিল।

Advertisement

সাম্প্রতিককালে অক্টোবর মাসে দুর্গাপুজোর সময় অসময়ের টানা বৃষ্টিতে নতুন করে প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছিল আনাজ চাষে। প্রসঙ্গত, বুলবুলের জেরে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কেশিয়াড়ি, দাঁতন, মোহনপুর, নারায়ণগড়ের ধান চাষিরা। কেশিয়াড়ির কানপুর, গগনেশ্বর, লালুয়া, খাজরা, নছিপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান জমিতে জমেছে জল। যদিও এই প্রসঙ্গে কেশিয়াড়ির বিডিও সৌগত রায় বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির তেমন কোনও খবর নেই। তবে চাষীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সরকারি শস্যবিমা প্রকল্পে ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী সাহায্য পাবেন চাষীরা।’’

ঘূর্ণিঝড় আগমণ টের শুরু করেছেন গড়বেতার তিনটি ব্লকের ধান ও আনাজ চাষিরাও। বুলবুলের দাপটে শনিবার ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে কখনও ঝিরঝিরে, কখনও ভারী বৃষ্টিতে গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা রোড ব্লক এলাকায় বিঘের পর বিঘে পাকা ধান গাছ নুইয়ে পড়েছে। ক্ষতির মুখে আনাজ চাষিরাও। জল জমেছে ফুলকপি, বাঁধাকপি গাছের গোড়ায়। আলু খেতেও জল দাঁড়িয়েছে। এতেই ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকেরা। জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, ‘‘বুলবুলের দাপটে ধান, আনাজের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’’ এখনই পরিস্থিতি ঝাড়গ্রামেরও। প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় ইতিমধ্যেই জেলার বিস্তীর্ণ খেতের পাকা ধান লুটিয়ে পড়েছে। ক্ষতি হয়েছে আনাজ চাষেরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement