প্রতীকী ছবি।
কেউ কেউ হালকা চালে বলছেন, জেলার উপর দিয়ে যে গতিতে আমপান ঝড় বয়ে গিয়েছিল, ক্ষতিপূরণে আবেদনের হিড়িক তো তার থেকেও বেশি!
তা-ও প্রথম দফা নয়, ঝড়ের প্রায় আড়াই মাস পরে আমপানের ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে আর এক দফা আবেদনের সুযোগ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। দু’দিনে পশ্চিম মেদিনীপুরে আবেদন জমা পড়েছে আড়াই লক্ষেরও বেশি! যা দেখে থ প্রশাসনের একাংশ আধিকারিকই। জোর দেওয়া হচ্ছে আবেদন খতিয়ে দেখায়।
জেলায় তিনটি মহকুমা। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, মোট আবেদন এসেছে ২,৫৭,৯৩১টি। সব থেকে বেশি খড়্গপুর মহকুমা থেকে— ১,৬৮,৭৪৮টি। মেদিনীপুর মহকুমা থেকে ৫৫,৩০৬টি ও ঘাটাল মহকুমা থেকে ৩৩,৮৭৭টি আবেদন এসেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল মানছেন, ‘‘অনেকগুলি আবেদন এসেছে। আবেদনগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ জানা যাচ্ছে, জেলার ব্লকগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি আবেদন এসেছে সবং থেকে— ৫২,৯৯৪টি। শহরের মধ্যে সবথেকে বেশি আবেদন এসেছে মেদিনীপুর থেকে— ২,৫০২টি। আবেদনের জন্য দু’দিন বরাদ্দ ছিল। গত বৃহস্পতি এবং শুক্রবার। দু’দিনই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বিডিও অফিসে ড্রপ বক্সে আবেদনপত্র জমা পড়েছে। দিনে ৬ ঘন্টা করে দু’দিনে ১২ ঘন্টা অর্থাৎ, দু’দিনে ৭২০ মিনিট বরাদ্দ ছিল আবেদনের জন্য। এই ৭২০ মিনিটে সবংয়ে আবেদনপত্র জমা হয়েছে ৫২,৯৯৪টি। অর্থাৎ, প্রতি মিনিটে ৭৪টি আবেদন জমা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শুনছি, সবংয়ে একটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেই সাড়ে পাঁচ হাজার আবেদন এসেছে। ওই পঞ্চায়েতে কতগুলি বাড়ি রয়েছে সেটা আগে দেখতে বলেছি।’’
আবেদনের পাহাড়
যে ১০ ব্লকে বেশি
• সবং ৫২,৯৯৪ • পিংলা ২৯,৪৪৭
• কেশপুর ২৬,২৮৩ • ডেবরা ২৩,৩৪০
• নারায়ণগড় ২২,০৭১ • গড়বেতা-১ ২১,২৬৮
• খড়্গপুর-২ ১৩,১৩৪ • দাসপুর-১ ১০,০০১
• মোহনপুর ৯,১১৩ • দাঁতন-১ ৮,৫১০
যে ৫ পুরসভায় বেশি
• মেদিনীপুর ২,৫০২ • ঘাটাল ২,১৫২
• রামজীবনপুর ১,৪১৩ • ক্ষীরপাই ১,৩৮৩
• চন্দ্রকোনা ৯৮৪
তথ্য: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন
আগেই একদফায় আমপানের ক্ষতিপূরণের আবেদন করা গিয়েছে। অনেকে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। তুলনায় কম হলেও সে পর্বে এই জেলাতেও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় ভুয়ো নাম ঢোকানোর অভিযোগ ওঠে। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো এ জেলাতেও ক্ষতিগ্রস্তদের সংশোধিত তালিকা তৈরি হয়। তালিকা যাচাইয়ে টাস্ক ফোর্স গড়া হয়। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে এ জেলার প্রায় ১০ হাজার জনকে বাড়ির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। প্রথম দফায় ৯,৫০০ জন, পরের দফায় ৫০০ জনকে। বাড়ির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তেরা পেয়েছেন ২০ হাজার টাকা। আংশিক ক্ষতিগ্রস্তেরা পেয়েছেন ৫ হাজার টাকা করে। তবে ওই পর্বে বহু ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে পারেননি বলে অভিযোগ ওঠে। সব দিক দেখেই রাজ্য সরকার আর এক দফা আবেদনের সুযোগ দেয়।
এ বার আবেদন যাচাইয়ের সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে সরকার। ১২ অগস্টের মধ্যে যাচাইয়ের কাজ শেষ করতে হবে। ১৪ অগস্ট জমা পড়া আবেদনের তালিকা প্রকাশ করা হবে ডিএম, বিডিও, পুরসভা অফিসে। ১৯ অগস্ট ‘এগিয়ে বাংলা’ ওয়েবসাইটে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে। শুক্রবার থেকেই আবেদন যাচাই শুরু হয়েছে। এ জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতস্তরে, ওয়ার্ডস্তরে প্রশাসনিক দল গড়ে সরেজমিন তদন্ত হচ্ছে। তাই শনিবার, লকডাউনেও যাচাইয়ের কাজ হয়েছে। আজ, রবিবারও হবে। কম সময়ে এলাকায় গিয়ে বিপুল আবেদনের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখা কী ভাবে সম্ভব, প্রশ্ন সেখানেই। পরিস্থিতি দেখে জেলা থেকে ব্লক এবং পুরসভাপিছু একজন করে ‘পর্যবেক্ষক’ নিযুক্ত করা হয়েছে। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটদেরই ‘পর্যবেক্ষক’ করে পাঠানো হয়েছে।
এ বার ‘ক্ষতিগ্রস্তেরা’ সরাসরি আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসনের ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘সরেজমিন পরিদর্শনে আবেদন খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। ত্রুটিহীন তালিকাই প্রকাশ হবে।’’