Coronavirus Lockdown

জলের জন্য গেল প্রাণ

প্রশাসন সূত্রে খবর, আমপানের ক্ষতির আশঙ্কায় আগেভাগেই মহকুমার প্রায় ২৫হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৩:৫১
Share:

অসহায়: ভেঙেছে ঘর। ধ্বংসস্তূপের মাঝে মেদিনীপুর সদর ব্লকের কাঁইকলা গ্রামের আনোয়ারা বিবি। ছবি: কিংশুক আইচ

এক ঘূর্ণিঝড় কেড়ে নিল দুই তরতাজা প্রাণ! দু’জনই জেলার একটি মহকুমার।

Advertisement

বুধবার রাতে মৃত্যুর ঘটনা দু’টি ঘটেছে খড়্গপুর মহকুমার মোহনপুর ও পিংলা ব্লকে। মোহনপুর ব্লকের বাগদায় খেজুর গাছ চাপা পড়ে জখম তরুণ শেষমেশ মারা গিয়েছেন। মৃত নবকুমার পাত্র (১৭) এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। ঝড়ের সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাড়ার টিউবওয়েলে জল আনতে যাওয়ার পথে ঘটে বিপত্তি। অন্য দিকে পিংলার দুজিপুরের রাউতচকের এক যুবক মারা গেলেন বাড়িতে গাছ পড়ার আতঙ্কে। মৃত রবিন পুর্তি (২৭) পেশায় চাষি ছিলেন। প্রবল ঝড়ে উঠোনে থাকা একটি গাছ বাড়ির অ্যাসবেস্টসের ছাউনিতে ভেঙে পড়তে দেখে মৃত্যু হয় ওই যুবকের। বৃহস্পতিবার মৃত দু’জনের বাড়িতেই যান প্রশাসন ও পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা। পিংলার মৃতের বাড়িতে গিয়েছিলেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রও।

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ মোহনপুরের বাগদা গ্রাম। নবকুমারের বাবা গোবিন্দ পাত্র, মা দীপিকা ও দাদা রাজকুমার দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করেন। দাদু নিত্যানন্দ পাত্র ও ঠাকুমা সনকা পাত্রের কাছেই থাকত নবকুমার। এ বার মাধ্যমিক দিয়েছিল সে। পরীক্ষার ফলপ্রকাশের আগেই বিধ্বংসী ঝড় কেড়ে নিল তার প্রাণ। দাদু নিত্যানন্দ বলেন, “সন্ধ্যায় ঝড়ের বেগ একটু কমায় টিউবওয়েল থেকে জল আনতে যাচ্ছিল নাতিটা। তখনই দমকা হাওয়ায় খেজুর গাছ ভেঙে চাপা পড়ে যায়।” প্রথমে এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি, পরে এসএসকেএমে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি।

Advertisement

রাতে ঝড় চলাকালীন বাড়িতে স্ত্রী ও বছর সাতেকের ছেলের সঙ্গে বসেছিলেন পিংলার রাউতচকের রবিন। বাড়ির অ্যাসবেস্টসের ছাউনিতে গাছ ভেঙে পড়তেই ভয়ে জ্ঞান হারান ওই যুবক। মূর্চ্ছ যান স্ত্রী-ও। রবিনের দাদা দিলীপ পুর্তি বলেন, “ভাইয়ের কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল না। চাষবাস করে খেটে খেত। বাড়ির চালে গাছ পড়ছে দেখে আতঙ্কে ও মারা গিয়েছে।” গাছ বাড়িতে পড়লেও অবশ্য ক্ষতি হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকেলে মৃতের বাড়িতে যান স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘পিংলা বিধানসভায় প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। বহু কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে। আর এই যুবক আতঙ্কে মারা গিয়েছেন।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, আমপানের ক্ষতির আশঙ্কায় আগেভাগেই মহকুমার প্রায় ২৫হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাতেও মৃত্যু ঠেকানো গেল না। এ দিন পিংলায় মৃত রবিনের বাড়িতে যান পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা। আর মোহনপুরে যান প্রশাসনিক কর্তারা। গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক বিক্রম প্রধানও। তিনি বলেন, “খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। একটা তরতাজা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী চলে যাওয়া বড় ক্ষতি। এই ক্ষতি পূরণ করা যাবে না। তবে সরকারি নিয়মে ওঁর পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে।” মৃত নবকুমারের দাদু নিত্যানন্দের কথায় শুধুই হাহাকার। বলছেন, “আমাদের অভাবে পরিবার। হয়তো ক্ষতিপূরণ অভাব মেটাতে কাজে লাগবে। কিন্তু আমার নাতি হারনোর শূন্যতা কেউ পূরণ করতে পারবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement