Cyclone Amphan

বৃষ্টিতে ডুবেছে খাল-পুকুর, বন্ধ একশো দিনের কাজ

তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই-২ পঞ্চায়েতের বলরামপুর গ্রামে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নিকাশিখাল সংস্কার শুরু হয়েছিল।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০৪:০৭
Share:

একশো দিনের কাজে খননের মাঝপথেই আমপানের বৃষ্টিতে ডুবেছে পুকুর। পাম্প চালিয়ে তোলা হচ্ছে জল। নন্দকুমারের কোলসর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

করোনার কারণে লকডাউনে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল একশো দিনের কাজের প্রকল্প। সমস্যায় পড়েছিলেন শ্রমিকের কাজ করা গ্রামের গরিব মানুষ। তবে লকডাউনের মাঝেই সরকারি ছাড়পত্র পেয়ে কিছুদিন আগে ফের চালু করা হয়েছিল ১০০ দিনের কাজ। নিকাশি খাল সংস্কার, পুকুর খনন, সামাজিক বনসৃজনের জন্য চারা তৈরির কাজ করেছিলেন জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। লকডাউনে কিছু রোজগারের আশা দেখেছিলেন শ্রমিকেরা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আমপান সব ওলটপালট করে দিয়েছে।

Advertisement

একদিকে ঝড়ের দাপটে বাড়িঘর ভেঙে ধূলিসাৎ। ক্ষতিগ্রস্ত চাষবাদ। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিতে যে সব নিকাশি খাল, পুকুর খননের কাজ চলছিল তা জলে টইটম্বুর হয়ে গিয়েছে। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে একশো দিনের কাজ। কাজ করতে না পারায় রোজগার বন্ধ হয়ে বিপাকে গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা। জেলার কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ঘূর্ণিঝড়ের প্রাক্কালে গত মঙ্গলবার জেলায় গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৫৪.৮ মিলিমিটার। আর বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের দিনে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ১৫৮ মিলিমিটার। অর্থাৎ দু’দিনে ২১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে জেলার অধিকাংশ এলাকায় চাষ জমি, পুকুর, নিকাশিখাল ডুবে গিয়েছে।

তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই-২ পঞ্চায়েতের বলরামপুর গ্রামে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নিকাশিখাল সংস্কার শুরু হয়েছিল। গ্রামের ৪০ জন বাসিন্দা কাজ করছিলেন। ১৫ দিনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ৯ দিন কাজের পরেই বুধবার আমপানের জেরে সেই নিকাশি খাল জলে ভরে গিয়েছে। ফলে পাঁচদিন ধরে কাজ বন্ধ। নারায়ণ গায়েন, বিশ্বজিৎ অধিকারী বলেন, ‘‘লকডাউনে দীর্ঘদিন কাজ না থাকায় সমস্যায় পড়েছিলাম। কিছুদিন আগে একশো দিনের প্রকল্পে খাল সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় হাতে টাকা পাওয়ার আশায় ছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে খাল ডুবে যাওয়ায় কাজ বন্ধ। কাজ শেষ না হলে টাকা পাওয়া যাবে না। ফের কবে কাজ করতে পারব জানি না। হাতে টাকা না থাকায় সংসার চালাতেও সমস্যায় পড়েছি।’’

Advertisement

নন্দকুমারের কুমরচক পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ২টি নিকাশিখাল ও ১০টি পুকুর খনন চলছিল। আমপানের জেরে জলে ডুবে গিয়েছে সব। ফলে মাঝপথে কাজ বন্ধ হওয়ায় বিপাকে বহু শ্রমিক। পঞ্চায়েত প্রধান বাসুদেব মন্ত্রী বলেন, ‘‘সপ্তাহ দু’য়েক আগে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এলাকায় নতুন পুকুর খনন ও মজে যাওয়া খাল সংস্কার শুরু হয়েছিল। প্রায় ৭০০ জন শ্রমিক কাজ করেছিলেন। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে সব পুকুর ও নিকাশিখাল ডুবে গিয়েছে। মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসুবিধায় পড়েছেন শ্রমিকেরা। দ্রুত কাজ চালু করার চেষ্টা চলছে।’’

নন্দকুমারের ব্যবত্তারহাট পূর্ব গ্রাম পঞ্চায়েতের কোলসর গ্রামে সোমবার দেখা গেল, পাম্প চালিয়ে পুকুরের জল ছেঁচা হচ্ছে। কাজের সুপার ভাইজার শিবপ্রসাদ ঘোড়ই বলেন, ‘‘পুকুর খননের ৬০০ শ্রমদিবস ধরা হয়েছে। ১৪ দিনে কাজ শেষ করার কথা। কিন্ত পাঁচদিন কাজ হওয়ার পরেই জলে ডুবে কাজ বন্ধ। ফের কাজ চালুর চেষ্টা চলছে।’’

জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘’প্রাকৃতিক দুর্যোগে একশো দিনের কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে পুনরায় কাজ চালু করতে পঞ্চায়েতগুলিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement