ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। কিন্তু এখনও যে বিলি হয়নি অনেক সাইকেল! এতেই শরতের আকাশে সিঁদুরে মেঘ প্রশাসনের অন্দরে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলায় এসে প্রশাসনিক বৈঠকও করবেন তিনি। বৈঠকে অন্য প্রকল্পের পাশাপাশি ‘সবুজসাথী’র হিসেব- নিকেশে চোখ বোলাতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। সব দেখে ঘুম ছুটেছে জেলা প্রশাসনের! কারণ, ‘সবুজসাথী’র অনেক সাইকেল এখনও বিলিই হয়নি! ফলে তড়িঘড়ি সাইকেল বিলির তোড়জোড় শুরু হয়েছে জেলায়।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের স্বীকারোক্তি, ‘‘সাইকেল বিলি এখনও কিছু বাকি রয়েছে।’’ কেন এই বিলম্ব তার কারণ ব্যাখ্যা করে ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রয়োজনের তুলনায় জোগান কম দেওয়া হয়েছিল জেলাকে। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি আরও জোগান দিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওই কোম্পানি সাইকেলগুলি ফিটিং করেই আমাদের দেয়। তখন আমরা সেই সাইকেল ব্লকে ব্লকে বিলির ব্যবস্থা করি। এখন ফিটিংয়ের কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলেই সাইকেলগুলি বিলি করে দেওয়া হবে।’’
ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যাতায়াতের সুবিধের জন্য ‘সবুজসাথী’ প্রকল্প চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নবম শ্রেণি থেকে স্কুল পড়ুয়াদের সাইকেল দেওয়া হয়। এক সময়ে শুধু ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া হত। এখন অবশ্য ছাত্রীদের পাশাপাশি ছাত্রদেরও সাইকেল দেওয়া হয়। জানুয়ারিতে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে শিক্ষাবর্ষ শেষ হয়ে যাবে। অথচ, পশ্চিম মেদিনীপুরে নবম শ্রেণির অনেক ছাত্রছাত্রীই এখনও সাইকেল পায়নি। কবে তাদের সাইকেল দেওয়া হবে তা জানে না তাদের স্কুলও। শালবনির এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘ব্লক থেকে এ ব্যাপারে এখনও কিছু জানানো হয়নি।’’ কেশপুরের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘কবে স্কুলে সাইকেল আসবে জানি না।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য ৬৯,৪৩৯টি সাইকেল বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিল। তবে এখনও এই সংখ্যক সাইকেল জেলায় আসেনি। এখনও পর্যন্ত জেলায় বিলি হয়েছে ২৪,৯৬২টি সাইকেল। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রের দাবি, শীঘ্রই জেলায় আরও ৩৭ হাজার সাইকেল বিলি হয়ে যাবে।
জেলা জুড়ে না কি ১৪৮ জন ফিটার সাইকেল ফিটিংয়ের কাজ করছেন। কোনও ব্লকে ১০- ১২ জন ফিটার কাজ করছেন। কোনও ব্লকে ১৫- ১৬ জন ফিটার কাজ করছেন। সম্প্রতি ফিটিংয়ের দায়িত্বে থাকা কোম্পানির এক আধিকারিককে ডেকে পাঠিয়েছিলেন এক অতিরিক্ত জেলাশাসক। অতিরিক্ত জেলাশাসক না কি তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। তাই দ্রুতই সাইকেল ফিটিং করে দিতে হবে।
আগে বিলি করা সাইকেল নিয়ে অনেক নালিশ উঠেছে। দেখা গিয়েছে, অনেক সাইকেলের চাকায় হাওয়া ছিল না। হ্যান্ডেল বাঁকা ছিল। ব্রেক ঝুলে গিয়েছিল। অনেক সাইকেল বিলি না করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়েছিল বলেও অভিযোগ। খোলা জায়গায় পড়ে পড়ে সাইকেলে মরচে ধরে গিয়েছিল। এমনকি, সাইকেলের কিছু অংশ চুরিও গিয়েছিল। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের আশ্বাস, ‘‘এ বার সাইকেলগুলি ঠিকভাবে ফিটিং করতে বলা হয়েছে।’’
ঘুম ছুটেছে সাইকেলে!