ভোটের দিন পুরনো মেজাজে অনুজ পান্ডে। পিছনে দলীয় কর্মী পরেশ মাহাতো। লালগড়ের ধরমপুর এলাকায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
নাম অনুজ। তবে ভোট পরিচালনায় তিনি বরাবরই অগ্রজ। অন্তত আর পাঁচজন কমরেডদের তুলনায়। কিন্তু কয়েকবছর তো সে সুযোগই পাননি সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডে। সুযোগ পেয়ে শনিবার ভোটের ময়দানে নামলেন অনুজ। চষে ফেললেন এলাকা। কোথায় ফাঁক আছে তা খুঁজে সেখানে ‘ফিন্ডার’ রাখলেন। তবে ব্যাটে বলে ছয় হয়েছে কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারলেন না অনুজ।
বেলপাহাড়ি থেকে লালগড়, নেতাই। এলাকায় জোড়াফুল আর পদ্ম পতাকার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে সিপিএমের লাল পতাকাও। শনিবার সকাল। পঞ্চায়েত ভোট শুরু হতেই দলীয় কর্মী পরেশ মাহাতোকে পিছনে বসিয়ে বাইক চালিয়ে লালগড় ব্লকের ধরমপুর অঞ্চলে একের পর এক বুথ ঘুরে দেখেছেন অনুজ। দুপুর ১২ টায় ধরমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে ভোট দেন তিনি। নেতাই-কাণ্ডের অভিযুক্ত অনুজ, ডালিম পাণ্ডে, শেখ খলিলুদ্দিন, চণ্ডী করণ, তপন দে-র মত নেতারা এদিন ‘লাল-গড়’ ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় দিনভর যে যাঁর এলাকায় ব্যস্ত থাকলেন। ভোট দিয়ে বেরিয়ে অনুজ বললেন, ‘‘১৫ বছর পর ভোট দিতে পারলাম। তবে এই ভোটে জনগণের রায় কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তা সত্ত্বেও সব খারাপের কিছুটা ভাল থাকে।’’
ধরমপুরে গিয়ে দেখা গেল, সিপিএমের দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে বস্তা ভর্তি চানাচুর আর মুড়ির প্যাকেট নিয়ে বসেছিলেন অনুজের সহোদর ভাই উজ্জ্বল পাণ্ডে। উজ্জ্বল জানালেন, দু’টো বস্তা খালি হয়ে গিয়েছে। তৃতীয় বস্তা থেকে চানাচুর আর মুড়ির প্যাকেট বিলোনো হচ্ছে। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শেষবার ভোট দিয়েছিলেন অনুজরা। তারপর মাওবাদীদের তাণ্ডব শুরু হওয়ায় তাঁরা এলাকা ছাড়া হন। পরে নেতাই কাণ্ডের অভিযুক্ত হয়ে ২০১৪ সাল নাগাদ গ্রেফতার হন অনুজরা। তবে এলাকায় ফিরে দলের সংগঠন পুনরুদ্ধারে লেগে পড়েছেন এক কালের দাপুটে নেতা অনুজ। দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে ফিরে দলের লালগড় এরিয়া কমিটির সম্পাদককে ফোনে সতর্ক করে দিয়ে অনুজ বার্তা— গত রাতে বাড়ি-বাড়ি মদ মাংস খাইয়েছে ওরা (তৃণমূল)। তাই ব্যালট বাক্সগুলো স্ট্রং রুমে না ঢোকা পর্যন্ত কর্মীরা যেন কড়া নজরদারি করেন।
কী করল গেরুয়া? বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রম নিজের গ্রামীণ এলাকায় ব্যস্ত ছিলেন। জেলা বিজেপির সভাপতি তুফান মাহাতো নিজের এলাকা মানিকপাড়ায় ছিলেন। আর জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু জেলা দলীয় কার্যালয়ে ‘ওয়ার রুম’ সামলেছেন। দিনের শেষে দেবাশিস বলছেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন জায়গায় ছাপ্পা পড়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না।’’
সকালে বেলপাহাড়ির শিমূলপাল অঞ্চলের বুড়িঝোর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথের সামনে দীর্ঘ লাইন। শিমূলপাল পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান জলেশ্বর সিং এবার পঞ্চায়েতে আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের প্রার্থী। পঞ্চায়েত সমিতির সমন্বয় মঞ্চের প্রার্থী বর্ষা মুর্মু। তাঁদের দাবি, তৃণমূল, বিজেপি, ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী থাকলেও সমন্বয় মঞ্চের প্রার্থীরাই জিতবেন। বুথে বিজেপির এজেন্ট ছিল না। তবে বুথের বাইরে ছিলেন বিজেপির অঞ্চল আহ্বায়ক সুষেন সিং। যিনি গতবার পঞ্চায়েত ভোটের সময় আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের আহ্বায়ক ছিলেন। বুথের বাইরে জমায়েত দেখে সরাতে উদ্যোগী হলেন সুষেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভোটটা শান্তিপূর্ণ ভাবে যাতে হয় সেই চেষ্টাই করছি।’’
বর্ষায় সবুজ গ্রামবাংলা। সবুজ জঙ্গলমহলে দেখা যাচ্ছে হলুদ জয় গরাম। সীমাবদ্ধ ক্ষমতায় লড়ল লাল-গেরুয়াও। মতের লড়াই প্রকাশ পেল রঙের লড়াইয়ে।