কারোর সঙ্গে সমঝোতা করবে না সিপিএম। প্রতীকী চিত্র।
কাঁটার নাম ‘নন্দকুমার মডেল’। কিন্তু সবুজ হটাতে গেরুয়ার সঙ্গে কোনও সমঝোতা নয়— নীচুতলাকে স্পষ্ট করে দিলেন লাল নেতৃত্ব। দিলেন লাল সতর্কতা, নির্দেশের অন্যথা হলে বহিষ্কারের মতো কড়া শাস্তি জুটতে পারে।
তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই গঠরা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচন ৪ ডিসেম্বর। সমবায় সমিতিতে আসন সংখ্যা ৪৩টি। সমবায় সমিতি সূত্রের খবর, সিপিএম-বিজেপি আসন সমঝোতা করে প্রতিটি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে। সমবায় সমিতি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও রাজনৈতিক দলগুলি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। খারুই গঠরা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচন জিততে গত রবিবার স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব বিজেপির হাত ধরে একসঙ্গে মিছিলও করেছেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। বিষয়টি কানে যেতেই সক্রিয় হয়েছেন সিপিএম জেলা নেতৃত্ব। ওই সমবায়ে দলের স্থানীয় নেতৃত্বদের জেলা সিপিএম কার্যালয়ে বুধবার ডেকে পাঠানো হয়েছিল। জেলা নেতৃত্বদের তরফে তাঁদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এরপর জেলা নেতৃত্ব দলের নীতি ও অবস্থান জানিয়ে ওই সমবায় সমিতির নির্বাচনে দলের সমস্ত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। না হলে ওই সমবায় ভোটের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় নেতৃত্বদের বিরুদ্ধে বহিষ্কার করার মতো কড়া পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘সমবায় সমিতির ভোটে কোনওভাবেই বিজেপির সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতা করে লড়াই করা যাবে না বলে জেলায় দলের সব এরিয়া কমিটিকে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ গত ৯ নভেম্বর নন্দকুমারের ‘বহরমপুর কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড’-এর নির্বাচনে ‘সমবায় বাঁচাও মঞ্চ’ গড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়েছিল বাম-বিজেপি জোট। ৬৩টি আসনের সব ক’টিতেই তৃণমূলকে পরাস্ত করে নজির গড়েছিল তারা। এটাই কালক্রমে ‘নন্দকুমার মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পায়। হাতে অস্ত্র পায় তৃণমূল। বাম-রাম জোটের তত্ত্ব প্রচার করতে থাকে তারা। স্বাভাবিক ভাবে অস্বস্তি বাড়ে সিপিএমের। ওই ঘটনায় কমিশন পর্যন্ত গঠন করে তারা। নীচুতলাকে সাফ বার্তা দেওয়া হয়, ‘নন্দকুমার মডেল’ আর নয়। কিন্তু সত্যি কি বার্তা নীচুতলা পর্যন্ত পৌঁছেছে? তা হলে কেন ফের নন্দকুমারের পাশের ব্লক মহিষাদলেও একই মডেল অনুসরণের চেষ্টা হবে(যদিও সে চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি)? ব্যর্থতার পরও কেন এক চেষ্টা হবে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে? কী বলছেন এই ব্লকের সিপিএম নেতৃত্ব? খারুই গঠরা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে প্রার্থিপদ জমা দিয়েছেন সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য দীনেশ মণ্ডল। জেলা নেতৃত্বের বার্তার পর কি মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন? দীনেশের জবাব, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছুই বলব না।’’
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব জানা একযোগে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি ও সিপিএমকে। তাঁর কথায়, ‘‘সিপিএম ও বিজেপি যে অনৈতিক জোট করেছে তা তারা প্রকাশ্যে এনেছে মিছিল করে। সিপিএম যদি পদক্ষেপ করে সেটা সাংগঠনিক বিষয়।’’ বিজেপি তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘জোটকে মানত্য দিচ্ছি না। বামফ্রন্ট বা অন্য কোনও দলের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করে লড়াই করা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
উঁচুতলা নীতিতে অনড়। বিজেপির গন্ধ বরদাস্তে নারাজ তারা। নীচুতলা দেখছে বাস্তবতা। পঞ্চায়েতের আগে সংঘাত চলছে লালের অন্দরে।