সক্রিয়: ত্রাণ বিলি করছেন ছত্রধর মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
তিনি জনসাধারণ কমিটির প্রাক্তন নেতা। লকডাউন পর্বে এই প্রথম লালগড়ের বাইরে বেরোলেন। শুক্রবার ঝাড়গ্রামের আঁধারিশোল গ্রামে গিয়ে ছত্রধর মাহাতো জনগণের উদ্দেশে বললেন, ‘‘রাজ্য সরকার করোনার মোকাবিলায় সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। আপনারা সরকারের নির্দেশ পালন করে বাড়িতে থাকুন।’’
এর আগে লালগড় ব্লক তৃণমূলের তরফে ছত্রধরকে ত্রাণ বিলির আমন্ত্রণ জানানো হলেও যাননি। তবে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আইনজীবী কৌশিক সিংহকে সঙ্গে নিয়ে ছত্রধর এ দিন যান ঝাড়গ্রাম ব্লকের নেদাবহড়া পঞ্চায়েতের আঁধারিশোলে। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে দশ কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম একসময়ে মাওবাদী ঘাঁটি ছিল। স্থানীয় এক আশ্রমের উদ্যোগে এলাকার পাঁচটি গ্রামের দরিদ্র লোধা-শবর ও অনগ্রসর শ্রেণির একশোটি পরিবারকে খাদ্য ও জরুরি পরিষেবার সামগ্রী তুলে দিতে ছত্রধরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিলেন ছত্রধর। সকলকে অনুরোধ করলেন, ‘‘পুকুরে সবাই মিলে স্নান বন্ধ করুন। কারও কোনও সমস্যা হলে পুলিশ-প্রশাসনকে জানান। আমাকেও জানাতে পারেন। আমি আপনাদের পাশে আছি।’’
আঁধারিশোল গ্রামের যে আশ্রমের ডাকে সাড়া দিয়েছেন ছত্রধর সেখানে সেবামূলক কাজে অর্থ সাহায্য করেছেন পুলিশের কয়েকজন হোম গার্ড ও সিভিক ভলান্টিয়ার। এঁদের দু-একজন মাওবাদী আন্দোলন পর্বে জনসাধারণের কমিটির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। পরে জেল খেটে ছাড়া পেয়ে মূলস্রোতে ফিরে হোম গার্ডের চাকরি পেয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম ছত্রধরের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আইনজীবী কৌশিক সিংহ জানান, উনি কেবল আজকের ত্রাণ বিলির বিষয়েই বলবেন। ছত্রধরও বলেন, ‘‘মানুষের পাশে দাঁড়াতে এসেছি। মানুষের কথা শুনতে এসেছি। কোনও রাজনৈতিক প্রশ্ন আজ নয়।’’
এই আঁধারিশোলে আগেও এসেছেন ছত্রধর। সময়টা ২০০৯। জনসাধারণের কমিটির আন্দোলন তখন তুঙ্গে। সে আন্দোলন ছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। মাঝে কেটেছে এক দশক। এ দিন পুলিশি পাহারায় আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে ছত্রধর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলছিলেন, ‘‘জঙ্গলমহলের জঙ্গলজীবী মূলবাসীরা জঙ্গলে যেতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে আশ্রম কর্তৃপক্ষের এই আয়োজন সিন্ধুতে বিন্দু হলেও তা দৃষ্টান্তযোগ্য ও প্রশংসনীয়।’’
সরো গ্রামের মেনকা ভক্তা, মাসাংডিহির স্বপন মল্লিক, আঁধারিশোলের অর্জুন পাতরদের সাবান দিয়ে বার বার হাত ধোয়ার পরামর্শ দেন ছত্রধর। কিন্তু অনেকে ঠিকমতো বুঝতে পারছিলেন না। এক সময় আইনজীবী কৌশিককে ছত্রধর বলেন, ‘‘কৌশিকবাবু, ওদের স্বাস্থ্যবিধিটা ভাল করে বুঝিয়ে দিন তো।’’ কৌশিক উপভোক্তাদের বোঝাতে থাকেন, কেন সাবান দিয়ে বার বার হাত ধুতে হবে।
আঁধারিশোলে ছিলেন প্রায় আধঘণ্টা। সামাজিক দূরত্ব মেনে বিলি করলেন ত্রাণ। কথা বললেন জনগণের সঙ্গে। আর জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা সারাক্ষণ সতর্ক ভাবে এড়িয়ে গেলেন রাজনীতিকে।