টিকিটের খোঁজ। শুক্রবার খড়্গপুর স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
দেশ জুড়ে ১জুন থেকে ট্রেন চলবে। প্রায় ২০০ জোড়া ট্রেন চলবে দেশজুড়ে। করোনা আবহেই শুরু হয়েছে সেই ট্রেন যাত্রার বুকিং। অবশ্য প্রথম দিনের বুকিংয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গুরুত্বপূর্ণ জংশন খড়্গপুর|
খড়্গপুরের ‘এ-ওয়ান’ স্টেশন। কিন্তু শুক্রবার সেখানে এসেও এসেও আশাহত হয়ে ফিরতে হল যাত্রীদের। লকডাউনে আটকে থাকা মানুষজন দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে এ দিন গন্তব্যে পৌঁছনোর টিকিট কাটতে এসেছিলেন। টিকিট বুকিং কাউন্টারও খুলেছিল। তবে টিকিট মেলেনি কাউন্টার থেকে। কর্মীরা জানিয়েছেন, রেলের ওয়েবসাইটে লগ-ইন করতে না পারার কারণেই এই জটিলতা। অথচ খড়্গপুরের হিজলি স্টেশনে নিয়ম মেনেই দেওয়া হয়েছে টিকিট। তবে শহরের প্রান্তিক এলাকায় অবস্থিত হিজলি স্টেশনে টিকিট কাটার তেমন ভিড় ছিল না। দুপুর ২টো পর্যন্ত হিজলি স্টেশনে ৭টি ফর্ম পূরণ করে ১৩জন যাত্রীর টিকিট কাটা হয়েছে। হিজলি পারলেও কেন মুখ থুবড়ে পড়ল ডিভিশনের সদর খড়্গপুর, সেই প্রশ্ন উঠেছে যাত্রী মহলে।
আগামী ১জুন থেকে রেল যে ২০০ জোড়া ট্রেন চালাবে বলে জানিয়েছে, তার মধ্যে খড়্গপুর ডিভিশনের উপর দিয়ে যাবে ৯টি ট্রেন। খড়্গপুর স্টেশনের উপর দিয়ে হাওড়া-মুম্বই, হাওড়া-আহমেদাবাদ, গুয়াহাটি-কুরলা, শালিমার-পটনা, হাওড়া-বরবিল মিলিয়ে ৫টি রুটে ট্রেন ছুটবে। এছাড়াও হিজলি দিয়ে হাওড়া-সেকেন্দ্রাবাদ, নয়াদিল্লি-পুরী, হাওড়া-যশবন্তপুর, হাওড়া-ভুবনেশ্বর মিলিয়ে ৪টি রুটে ট্রেন যাবে। তাই খড়্গপুর ও হিজলি স্টেশনে এ দিন থেকে ওই সব ট্রেনের টিকিট বুকিং চালু করেছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে টিকিট কাটতে খড়্গপুর স্টেশনে এসেছিলেন রাইপুরের বাসিন্দা যশপাল চৌহান। তিনি বলেন, “লকডাউনের আগে দিদির পেনশনের টাকা নিতে আমরা ৩জন রাইপুর থেকে এসেছিলাম। আর বাড়ি ফিরতে পারিনি। আয়মায় ঘর ভাড়া নিয়ে থেকে গিয়েছি। রাইপুরে আমার আর এক বোন হাসপাতালে ভর্তি। দ্রুত সেখানে যেতে হবে। ভেবেছিলাম ১জুন ট্রেনে যাব। কিন্তু টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি।” একই সমস্যায় পড়েছেন ধানবাদের চিকিৎসক মহম্মদ ইকরামুল হক | তিনি বলেন, “১৮মার্চ শ্বশুরবাড়ি থেকে স্ত্রীকে নিতে এসে আটকে গিয়েছি। ভেবেছিলাম রেলের ঘোষণা মতো খড়্গপুর স্টেশনে টিকিট পাব। কিন্তু এখানে তো ‘লিঙ্ক নেই’ বলেই দায় সেরে দিচ্ছে। রেলের এই পরিষেবা দেখে হতাশ হলাম।”
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, লকডাউন ও আমপানের জেরেই এই বিপত্তি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কাজ করছে না রেলের সার্ভারে লগ-ইনের আইডি ও পাসওয়ার্ড। তবে হিজলি স্টেশন হয়ে দিল্লি-ভুবনেশ্বর প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলায় অনেক আগেই শুধুমাত্র কনশেসন টিকিটের জন্য খুলে গিয়েছিল হিজলি স্টেশনের টিকিট কাউন্টার। তাই হিজলিতে লগ-ইনে কোনও জটিলতা হয়নি। কিন্তু যাত্রীদের তা বোঝাতে হিমশিম খেয়েছেন খড়্গপুর স্টেশনের বুকিং ক্লার্করা। এ দিন কর্তব্যরত বুকিং কার্ক কে রামনা রাও বলেন, “আমি তো সকাল থেকেই বসে রয়েছি। লগ-ইন না হলে টিকিট দেব কীভাবে। আমি আমাদের আধিকারিকদের জানিয়েছি।” বিষয়টি নিয়ে খড়্গপুরের সিনিয়র ডিভিশনাল কর্মাশিয়াল ম্যানেজার আদিত্য চৌধুরী বলেন, “আসলে দীর্ঘদিন লগ-ইন না হওয়ায় খড়্গপুরে সমস্যা হয়েছে। আমরা জোনাল অফিসে জানিয়েছি। কিন্তু আমপানের কারণে সেখানেও সার্ভার বসে যাওয়ায় আইডি মেরামত করা যাচ্ছে না। তবে যাত্রীরা চাইলে আপাতত হিজলি থেকে টিকিট পাবেন।”