গণ্ডিবদ্ধ এলাকাতেও আড্ডা। পরে মেদিনীপুরের ওই এলাকাটি িসল করে পুলিশ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
‘লাল’ জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের ৫টি এলাকা গণ্ডিবদ্ধ (কন্টেনমেন্ট) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে রাজ্যের তরফেই। সোমবার রাতে ওই এলাকাগুলির নামের তালিকা এসে পৌঁছয় জেলায়। এই আবহে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জেলাস্তরের টাস্ক ফোর্সের জরুরি বৈঠক হয়েছে মঙ্গলবার। মেদিনীপুরে কালেক্টরেটের সভাকক্ষে ওই বৈঠকে মূলত গণ্ডিবদ্ধ এলাকাগুলির পরিস্থিতি পর্যালোচনা হয়েছে বলে প্রশাসন এক সূত্রে খবর।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুরের ৫টি এলাকা কন্টেনমেন্ট এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হচ্ছে।’’ এ দিন বৈঠকে ছিলেন জেলাশাসক রশ্মি কমল, জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা, জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু প্রমুখ। জেলাশাসকই ওই টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান। প্রশাসন সূত্রে খবর, তৃতীয় দফার লকডাউনে অন্য এলাকায় কিছু ছাড় থাকলেও গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় কোনও ছাড় নেই। রাজ্য জানিয়েছে, গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় পুরো লকডাউন থাকবে। ফলে, জেলার ওই ৫টি এলাকায় লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর করা নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
এর আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও এলাকা পৃথকভাবে গণ্ডিবদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হয়নি। প্রশাসন সূত্রে খবর, দাসপুর- ১ ব্লকের নন্দনপুর- ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজামপুর, ঘাটাল শহরের ১৩ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহাপাত্র পাড়া, খড়্গপুর শহরের ১৮ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড এবং মেদিনীপুর শহরের ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের গেটবাজার এলাকা গণ্ডিবদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। দাসপুরের ওই গ্রামের এক পরিবারের তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সকলেই অবশ্য এখন রোগমুক্ত হয়ে ফিরেছেন। পরে ঘাটাল শহরের বাসিন্দা এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক, খড়্গপুরের ৭ জন আরপিএফ জওয়ান করোনায় আক্রান্ত হন। এই সব সংক্রমণের সূত্রেই এলাকাগুলিকে গণ্ডিবদ্ধ করা হয়েছে।
কিন্তু মেদিনীপুর শহরের স্টেশনপাড়াও গণ্ডিবদ্ধ কেন? প্রশাসন সূত্রে খবর, ৭ জন রেলরক্ষীর মধ্যে এক জন মেদিনীপুরে ছিলেন। ওড়িশার বালেশ্বরে কর্মরত, করোনা আক্রান্ত এক রেলক্ষীর সংস্পর্শে আসায় পরে তাঁকে খড়্গপুরে নিভৃতবাসে রাখা হয়েছিল। তখনই তাঁর করোনা ধরা পড়ে। যেহেতু সংস্পর্শে আসার পরে ওই রেলরক্ষী কিছুদিন মেদিনীপুরের ওই এলাকায় ছিলেন, তাই ওই এলাকা গণ্ডিবদ্ধ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। জানা যাচ্ছে, মেদিনীপুরে কর্মরত ওই আরপিএফের সংস্পর্শে আসায় পরবর্তী সময়ে আরও ৬ জন আরপিএফের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। তাঁদের সকলের রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে।
এ দিনের বৈঠকে করোনা পরীক্ষার হার আরও বাড়ানোর উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, পরীক্ষার হার আগের থেকে বেড়েছে। সূত্রের খবর, সোমবার পর্যন্ত মেদিনীপুর মেডিক্যালে ১,৫০৩ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। সিংহভাগই পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা।
জেলা থেকে গণ্ডিবদ্ধ এলাকার তালিকা সংশ্লিষ্ট শহর, ব্লকে পাঠানো হয়েছে। আগামী ১২ মে পর্যন্ত এলাকাগুলি গণ্ডিবদ্ধ হিসেবেই থাকবে। তারপর পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে রাজ্যের তরফে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র মানছেন, ‘‘সব দিক দেখে ওই এলাকাগুলিতে যে ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হচ্ছে।’’