হিজলি স্টেশন পরিদর্শনে পুলিশ- প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র
আজ, বুধবার খড়্গপুরে পৌঁছনোর কথা তামিলনাড়ুর ভেলোর থেকে রওনা হওয়া বিশেষ ট্রেনের। প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই ট্রেনে রাজ্যের ৫টি জেলার ১,২০৭ জন রয়েছেন। সকলকে সুষ্ঠুভাবে বাড়িতে পৌঁছে দিতে জেলাওয়াড়ি নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। নোডাল অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটদেরই। পাশাপাশি, গঠন করা হয়েছে একাধিক সেলও। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলের নির্দেশেই এই পদক্ষেপ। রবিবার মেদিনীপুরে কালেক্টরেটে এক বৈঠকে ভেলোর ফেরত ট্রেনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে জেলাশাসক ছাড়াও ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসকে, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটরা।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে বুধবার বিকেলে খড়্গপুরের হিজলিতে ট্রেন পৌঁছনোর কথা। পরে এখান থেকে বাসে ওই যাত্রীদের নিজ নিজ জেলায় পৌঁছে দেওয়া হবে। মোট ৪০টি বাসের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। হিজলিতে ওই যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হবে। সকলকে একসঙ্গে ট্রেন থেকে নামতে দেওয়া হবে না। এক-একটি কামরা থেকে দশজন করে নামানো হবে। বাসে তুলে সবাইকে দেওয়া হবে টিফিন। পুরপ্রধান তথা বিধায়ক প্রদীপ সরকার বলেন,‘‘ পরিযায়ীদের সুষ্ঠুভাবে ঘরে ফেরাতে যা করণীয় আমরা করব। পুরসভার পক্ষ থেকে জল ও ভ্যাটের বন্দোবস্ত করছি।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, এক-একটি জেলার জন্য ২ থেকে ৪ জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে নোডাল অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সংশ্লিষ্ট জেলার ওই যাত্রীদের যাবতীয় বিষয় দেখভাল করবেন। কোনও সমস্যা হলে দ্রুত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, ভেলোর থেকে যাঁরা ফিরছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন খুব অসুস্থ, শারীরিকভাবে অক্ষম। এঁদের জন্য স্টেশনে হুইল চেয়ার রাখা হচ্ছে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার হিজলিতে এক প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছে। এ দিন হিজলি স্টেশনে গিয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেছেন জেলার পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার। সঙ্গে ছিলেন খড়্গপুরের মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ, বিধায়ক তথা পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার প্রমুখ। মহকুমাশাসক বৈভব বলেন, ‘‘আমাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। জেলা পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে মহড়া সেরে নিলাম।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই ট্রেনে পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৪৪ জন রয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের নোডাল অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা পরিষদের উপ-সচিব উৎপল ঘোষ-সহ ৪ জন। পূর্ব মেদিনীপুরের ৩৬৩ জন যাত্রীর জন্য নোডাল অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক সুদীপ্ত সাঁতরা সহ-৩ জন। হুগলির ২১৫ জন রয়েছেন। হুগলির ক্ষেত্রে নোডাল অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন আধিকারিক অয়ন নাথ-সহ ২ জন। কলকাতার দায়িত্বে জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক দেবব্রত সাউ-সহ ২ জন এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার নোডাল অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন এসসি, এসটি ফিনান্স কর্পোরেশনের জেলা আধিকারিক পার্থ ভৌমিক-সহ ২ জন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, গোটা প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সারতে জেলাওয়াড়ি টেবিল থাকছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য ৩টি, পূর্ব মেদিনীপুরের ৪টি, হুগলির ২টি, কলকাতার ১টি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ৩টি— সব মিলিয়ে ১৩টি টেবিল থাকছে। জেলাপিছু এক থেকে দু’জন এমভিআই (মোটর ভেকিলস ইন্সপেক্টর) থাকছেন। টেবিলপিছু আরও ৪ জন করে কর্মী থাকবেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, ২টি সেলও গঠন করা হয়েছে। একটির পোশাকি নাম ‘ফুড অ্যান্ড লজিস্টিক সেল’। অন্যটির ‘আইটি কমিউনিকেশন সেল’। পাশাপাশি, ‘কো-অর্ডিনেটিং’ অফিসারের দায়িত্বে থাকছেন দু’জন। স্বনির্ভর এবং স্বনিযুক্তি দফতরের জেলা আধিকারিক সিদ্ধার্থ গুঁইন এবং জেলা যুবকল্যাণ আধিকারিক দীপ ভাদুড়ী। সব কিছু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকছেন খড়্গপুরের মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী। আর গোটা প্রক্রিয়ার তত্ত্ববধানে থাকছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সৌর মণ্ডল।