প্রতীকী ছবি।
বাংলা, ঝাড়খণ্ড— দুই রাজ্যের সম্মতি ছিল। বাংলার পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম- দুই জেলারও সম্মতি ছিল। উভয়ের সম্মতিতে পরিযায়ী শ্রমিক হস্তান্তর হল দুই রাজ্যের সীমানায়। ঝাড়খণ্ড থেকে কিছু শ্রমিক ফিরলেন বাংলায়। আবার বাংলা থেকে কিছু শ্রমিক ফিরলেন ঝাড়খণ্ডে। সোমবার দুই রাজ্যের সীমানায় পরিযায়ী শ্রমিক হস্তান্তর হয়েছে বলে প্রশাসনের এক সূত্রে খবর। ওই সূত্রের দাবি, লকডাউনপর্বে এ ভাবে শ্রমিক হস্তান্তর এই প্রথম হল। প্রশাসনিক সূত্র এটিকে ‘এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’ হিসেবেই দেখছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক মানছেন, ‘‘বাংলা- ঝাড়খণ্ড সীমানায় এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম হয়েছে। লকডাউনের জেরে ঝাড়খণ্ডে আটকে থাকা বেশ কয়েকজন শ্রমিক বাংলায় ফিরেছেন। আবার বাংলায় আটকে থাকা বেশ কয়েকজন শ্রমিক ঝাড়খণ্ডে ফিরেছেন।’’ প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সমস্ত কিছুর দেখভাল করতে ওই দিন সীমানায় গিয়েছিলেন স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি দফতরের জেলা আধিকারিক সিদ্ধার্থ গুঁইন এবং ডিএমডিসি (সদর) মদনমোহন মুর্মু।
জেলা পুলিশের এক সূত্র মানছে, মাওবাদী পর্বে সমন্বয় রেখে পুলিশি অভিযান চালিয়ে সাফল্য পেয়েছে দুই রাজ্যের পুলিশ। নড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে মাওবাদীদের শক্ত ভিতকে। এ বার অন্য এক পরিস্থিতিতে ফের সমন্বয় রেখে কাজ করতে হচ্ছে। লকডাউনে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। শ্রমিকদের বেশ কয়েকজন রেললাইন কিংবা সড়কপথ ধরে হাঁটা শুরু করেছিলেন। দিন কয়েক আগেই অওরাঙ্গাবাদে ঘুমন্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের পিষে দিয়েছে মালগাড়ি। সেই ছবি এখনও টাটকা। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দুই রাজ্যই ‘এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে’ সম্মতি দেয়।
ঠিক হয়েছে, বাংলার পশ্চিম মেদিনীপুরে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাসে করে ঝাড়খণ্ড সীমানায় যাবেন। সীমানায় তাঁদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। পরে তাঁরা সীমানার ওপারে থাকা বাসে করে যে যাঁর বাড়িতে পৌঁছবেন। একইভাবে ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাসে করে বাংলার সীমানায় আসবেন। সীমানায় তাঁদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। পরে তাঁরা সীমানার এপারে থাকা বাসে করে যে যাঁর বাড়িতে ফিরবেন। সেই মতো সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে পূর্ব সিংভূমে ফিরে গিয়েছেন ২৫৪ জন পরিযায়ী শ্রমিক। আবার পূর্ব সিংভূম থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরে ফিরে এসেছেন ১২৯ জন পরিযায়ী শ্রমিক। দেখা যায়, ঝাড়খণ্ড থেকে ফেরা শ্রমিকদের কয়েকজনের বাড়ি মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়ায়। মঙ্গলবার বাসে করে তাঁদের সংশ্লিষ্ট জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, পুরোপুরি সুষ্ঠুভাবে এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া হয়েছে। ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরে ফেরা এক পরিযায়ী শ্রমিক বলছিলেন, ‘‘দুই রাজ্যের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’ সূত্রের খবর, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শীঘ্রই পড়শি একাধিক রাজ্যের সঙ্গে এ ভাবে পরিযায়ী শ্রমিক হস্তান্তর হতে পারে।