ঘরে ফিরছেন কীর্তন শিল্পীরা। নিজস্ব চিত্র
ফিরতে চান বাড়ি। ভিডিয়োয় মুখ্যমন্ত্রীকে করজোড়ে সে কথা জানিয়েছিলেন ১৪ জন কীর্তন শিল্পী। তৎপর হল প্রশাসন। ঝাড়খণ্ড থেকে গড়বেতা ফিরলেন ওই ১৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৬ জন নাবালিকা। দেড়মাস পর ঘরে ফিরে তাঁরা কৃতজ্ঞতা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
গড়বেতা ১ ব্লকের আগরা অঞ্চলের মেঘুলা গ্রামের কীর্তন গান সম্প্রদায়ের একটি দল ১৯ মার্চ ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংহভূম জেলার পটকা ব্লকের জামদা গ্রামে গিয়েছিলেন। কয়েকদিন ধরে সেখানে বসেছিল আসর। সেই আসরেই গান শোনাতে গিয়েছিল ওই দল। লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় সেখানেই আটকে পড়েন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় সেখানেই তাঁরা একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে রান্না করে খেতেন। দলের প্রধান হরিপদ দুলে, রাজু দুলে বলেন, ‘‘দেড়মাস থাকার পর ১২ বছরের মৌমিতা দুলে, ১৪ বছরের বর্ষা দাস, ১৬ বছরের প্রতিমা দুলে, রুম্পা দুলেরা ঘরে আসার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল।’’
গড়বেতা ১ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভিন্ রাজ্যে আটকে থাকাদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হলে গড়বেতার এই কীর্তন শিল্পীরা জামদা থেকে অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করেন। একসঙ্গে তাঁদের করজোড়ে ভিডিয়ো বার্তা রাজ্য সরকারের অ্যাপে আপলোড করা হয়। ভিডিয়োয় তাঁরা সঙ্গের নাবালিকাদের দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মা’ সম্বোধন করে আবেদন করেন— ‘আপনাকে মায়ের মতো করেই বলছি, এইসমস্ত বাচ্চাদেরকে নিয়ে যাওয়ার একটা পারমিশন দিন’।
এরপরই রাজ্য প্রশাসন থেকে ঝাড়খণ্ড প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। উদ্যোগী হয় জেলা প্রশাসনও। ঝাড়খণ্ড প্রশাসন থেকে তাঁদের প্রত্যেকের 'ই-পাস' করে দেওয়া হয়। এরপরই আগরা অঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি আজিম চৌধুরী, পঞ্চায়েত সদস্য মন্টু রুইদাস সহ মেঘুলা গ্রামের কয়েকজন গড়বেতা থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করে ঝাড়খণ্ডের জামদা গ্রামে পাঠান। সেই গাড়িতেই নিজেরা ভাড়া দিয়ে রবিবার গড়বেতায় গ্রামের বাড়িতে ফেরেন কীর্তন শিল্পীরা। ঝাড়খণ্ড থেকে ফিরে তাঁরা এখন গৃহ পর্যবেক্ষণে আছেন। ফোনে রাজু দুলে, হরিপদ দুলেরা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, ওঁকে ভিডিয়ো করে না জানালে আমাদের যে কী হতো তা ভাবলেই ভয় লাগছে।’’
হায়দরাবাদ থেকে ৩৪ জন পরিযায়ী শ্রমিক বাস ভাড়া করে গড়বেতায় ফেরেন মঙ্গলবার। হায়দরাবাদে কেউ নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন, কেউ বা জরির। গড়বেতার ললিতগঞ্জ, আঙারিয়া, পাশের বাঁকুড়া জেলার বড় আঙারিয়া, বৈতল, জয়পুর এলাকার এই শ্রমিকেরা মোট ১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে বাসে করে হায়দরাবাদ থেকে গড়বেতায় ফেরেন। বাস থেকে নামার পর তাঁদের এদিন গড়বেতা স্টেডিয়ামে এনে রাখা হয়। স্থানীয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে তাঁদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘এই শ্রমিকদের পরীক্ষা করে যে যার বাড়িতে পৌছে দেওয়া হবে। সেখানেই তাঁরা গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকবেন।’’