COVID-19

কোভিড ওয়ার্ডে সাহায্যে পৌঁচ্ছে যাচ্ছে ছাত্র-দল

চিকিৎসাধীন সংক্রমিতদের কাছে একপ্রকার ভরসা হয়ে উঠেছেন একদল ছাত্র। তাঁরাই পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার, ওষুধপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২১ ০৪:৪৪
Share:

করোনা ওয়ার্ডে কৌশিক।

মুশকিল আসান হচ্ছে একদল ছাত্র।

Advertisement

হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড। সংক্রমিত হয়ে পরিজন ভর্তি থাকলেও ভয় এবং আতঙ্কে অনেকে ওই ওয়ার্ডের ধারেকাছে ঘেঁষতে চান না। এই পরিস্থিতিতে সেখানে চিকিৎসাধীন সংক্রমিতদের কাছে একপ্রকার ভরসা হয়ে উঠেছেন একদল ছাত্র। তাঁরাই পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার, ওষুধপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। শুধু নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করে জানালেই হল।

সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি হাসপাতাল—মেদিনীপুরে কোভিড ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছচ্ছেন কৌশিক কঁচ, রাজকুমার বেরা, অনিমেষ প্রামাণিকরা। দিনদুপুর হোক কিংবা রাতবিরেত, ফোন পেলেই ছুটছেন তাঁরা। কৌশিক বলছিলেন, ‘‘কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের খাবার, ওষুধপত্র, অনান্য প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিচ্ছি আমরা।’’ তিনি মানছেন, ‘‘করোনা ভীতিতে স্বজনের কাছে যাচ্ছেন না অনেকে। পাশে থাকতে এগিয়ে আসছেন না পরিজনেরা। তাই আমরা ঠিক করেছি, চিকিৎসাধীনদের যা কিছু প্রয়োজন হবে, সে সব জিনিসপত্র আমরা তাঁদের কাছে পৌঁছে দেব।’’ ‘মেদিনীপুর ছাত্রসমাজ’ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কৌশিকরা। বিষয়টি সকলকে জানাতে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তাঁরা লিখেছেন, ‘আপনার দুয়ারে ছাত্রসমাজ। কোভিড আক্রান্ত যে কোনও পরিবার কোনও সামগ্রী বা ওষুধপত্রের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন আমাদের সঙ্গে। আমরা যথাসম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করব।’

Advertisement

অনিমেষদের কখনও যেতে হচ্ছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সারি-এইচডিইউ ইউনিটে। কখনও যেতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে। কৌশিক শোনালেন, ‘‘হাসপাতাল কর্মীদের কেউ কেউ আমাদের রোগীর বাড়ির লোকই ভাবেন। যেমন এক রোগী কিছু ফল কিনে দিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। সে সব ফল কিনে তাঁকে দিতে গিয়েছিলাম মেডিক্যালের এইচডিইউ ওয়ার্ডে। তখন হাসপাতালের এক কর্মী এসে একটা ওষুধ এনে দিতে বললেন। কারণ ওই কর্মী আমাদের রোগীর বাড়ির লোক ভেবেছিলেন। আমরা তাঁকে কিছু বলিনি। যে ওষুধটা আনতে বলেছিলেন, এনে দিয়েছি।’’

তাঁদের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলেই। জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ জীব। সরাসরি সংস্পর্শে না- গিয়েও পাশে থাকা যায়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সংক্রমিতদের একঘরে করা কিংবা অচ্ছ্যুতের মতো দেখার যে প্রবণতা এখনও কিছু ক্ষেত্রে রয়ে গিয়েছে তা কিন্তু মারাত্মক।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পাশে থাকতে হবে সহানুভূতির সঙ্গে। আর্ত ব্যক্তি যাতে সাহায্যটুকু পায়, তা নিশ্চিত করতেই হবে।’’ হাসপাতালের এক কর্মীও বলছিলেন, ‘‘পরিজনের করোনা মানে তাঁরও করোনা হয়ে যাবে নিশ্চিত, এমন ভেবে ফেলছেন কেউ কেউ। এটা তো ভুল ধারণা। সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে ঠিকই, তবে এটা আসলে দৈহিক দূরত্ব। খানিকটা ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলা।’’

চিকিৎসাধীন এক সংক্রমিত বলছিলেন, ‘‘বাড়ির লোকেরা আসতে চায় না। ওদের কাছে (একদল ছাত্র) সাহায্য চেয়ে পেয়েছি।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘অসুস্থতার সময়টায় মানসিক লড়াই চালাতে হয় একা রোগীকেই। এটা ওরা বুঝতে পেরেছে। ওরা এ ভাবেই মানুষের পাশে থাকুক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement