মুখে নেই মাস্ক। মেদিনীপুরের এলআইসি মোড়ে। সোমবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় যথেষ্ট পরিমাণে করোনার প্রতিষেধক পৌঁছেছে। তবে তা নেওয়ার ব্যাপারে প্রত্যাশা অনুযায়ী উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের অবশ্য আশা, ভোট মিটেছে। তাই এ বার করোনার টিকাকরণের গতি বাড়বে। চলতি মাসের মধ্যে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অনেকটা পূরণ হবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে ষাটোর্ধ্ব ৬,৩৪,৪০৮ জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার কথা। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১,২৫,৭৫৮ জন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ শতাংশ। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৫৯৪ জন। যাঁদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একাধিক রোগে (কোমর্বিডিটি) ভুগছেন, জেলায় এমন ১,৫৮,৬০১ জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার কথা। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৩৪,৩২৬ জন। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার ২২ শতাংশ আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মাত্র ৭২ জন।
শহর এলাকায় বসবাসকারী ৪৫ বছরের বেশি বয়সীরাও প্রতিষেধক পেতে পারেন। এমন ১,৪৯,৭২২ জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার কথা। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৩,১২৩ জন। অর্থাৎ প্রায় ২ শতাংশ। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৪৩ জন।
জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন ব্লকেও এই প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। যেমন গড়বেতা ১ ব্লকের ১২টি ও গড়বেতা ১ ব্লকের ১১টি কেন্দ্রে প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ চলছে। গড়বেতা ১ এর বিএমওএইচ সঞ্চিতা কর্মকার বলেন, ‘‘করোনার প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে।’’ গড়বেতা ২ এর বিএমওএইচ বিকাশ সিংহ বলেন, ‘‘সর্বস্তরের মানুষ যাতে সহজেই নিতে পারে সেজন্য প্রক্রিয়া সরল করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া ৪৫ বছরের বেশি বয়সী সবাই এই প্রতিষেধক নিতে পারেন।’’
জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘প্রতিষেধক নিলে ভয়ের কিছু নেই। তবুও কারও কারও মধ্যে ভীতি রয়েছে। সেটা দূর করার সব রকম চেষ্টাই চলছে।’’ জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক মানছেন, ‘‘প্রতিষেধক নেওয়ার ক্ষেত্রে কারও কারও অনীহা রয়েছে। এটা অনভিপ্রেত। করোনার প্রতিষেধক নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। ফলে, জোর করারও উপায় নেই। বোঝানো হচ্ছে। সচেতন করা হচ্ছে।’’
প্রযুক্তিগত বাধাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে। ‘কো-উইন’ অ্যাপে বিভ্রাট দেখা দেওয়ায় প্রাপকদের সঙ্গে যোগাযোগে কিছু সমস্যা হচ্ছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য জানান, বয়স্কদের প্রতিষেধক দেওয়ার বিষয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি সারা হয়েছে। বয়স্ক মানুষেরা টিকাকরণ কেন্দ্রে এলে অ্যাপে নাম নথিবদ্ধ করাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের সাহায্য করছেন।
করোনাকে হারাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই প্রতিষেধক নিতে অনুরোধ জানাচ্ছে চিকিৎসক সংগঠনগুলিও। তারা মনে করিয়ে দিচ্ছে, কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিন টিকা শরীরে ঢোকার পর শরীরে প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তার ফলে রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠে। জেলায় এখনও পর্যন্ত যাঁরা প্রতিষেধক নিয়েছেন, তাঁদের বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়নি। কারও কারও সামান্য জ্বর এসেছে। মেদিনীপুরের এক চিকিৎসকের কথায়, যে কোনও রোগের টিকার ক্ষেত্রেই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। টিকা নেওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি শরীরে কোনও নতুন কিছু অনুভূতি হয়, তবে অতি দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
(তথ্য সহায়তা: রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য)