এই নোটিস ঘিরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
করোনার টিকা নিয়ে মানুষের ভোগান্তি অব্যাহত।
ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেওয়ালে সাদা কাগজে ছাপানো নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘আগামীকাল ভ্যাকসিন হবে না’। নীচে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের স্বাক্ষর। তারিখ না থাকা ওই নোটিস দেখে মঙ্গলবার সকালে তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্যাকসিন নিতে আসা ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা ও স্থানীয় নোনাকুড়ি বাজারের ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ থাকবে। কিন্তু ভোর রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা কয়েক’শ বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীকে সকাল ১০ টা নাগাদ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয় আগামীকাল বলতে আজ, মঙ্গলবার ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ থাকবে। এ কথা জানার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে অপেক্ষারত লোকজন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসেন বিডিও অমিত গায়েন। আসে তমলুক থানার পুলিশ বাহিনী। আলোচনার পরে বিডিওর আশ্বাস পেয়ে বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা ফিরে যান।
নোনাকুড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিতাই সামন্ত জানান, সোমবার রাত ১০টা নাগাদ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানান, মঙ্গলবার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তাই মঙ্গলবার সকালে বাজারে মাইক প্রচার করে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছিল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য। ওই ঘোষণার পরেই এদিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্যাকসিন নিতে গিয়েছিলেন প্রায় আড়াইশো ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেওয়ালে তারিখ হীন ‘নোটিস’ দেখে করোনার টিকা নিতে যাওয়া লোকজন ভেবেছিলেন আগামীকাল বলতে বুধবার ভ্যাকসিন বন্ধ থাকবে। কিন্তু পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয় গতকাল ওই নোটিস দেওয়া হয়েছিল। তাই আজ ভ্যাকসিন বন্ধ থাকবে। এতে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন বিভ্রান্তি ও হয়রানির শিকার হন।
সমস্যার কথা স্বীকার করে বিডিও বলেন, ‘‘সুপার স্প্রেডার হিসেবে চিহ্নিত নানা পেশার মানুষকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে । এ দিন ২২০ জন ব্যবসায়ীকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি ছিল। তবে সাধারণ লোকজনও এসেছিলেন। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তারিখ হীন একটি নোটিস নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তবে পরে আলোচনায় বিষয়টি মিটে যায়।’’ তিনি জানান, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন পেশার অগ্রাধিকার পাওয়া ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেই সাধারণ বাসিন্দাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
হলদিয়া ব্লকের বাড়ঘাসিপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এদিন ১৫৪ জন স্কুল শিক্ষক ও রাঁধুনি টিকা পান। ব্রজলালচকের বাসিন্দা শচীন সামন্ত এদিন টিকা নেন। তিনি জানান, বেশ কয়েক দিন চক্কর কাটার পর জানতে পারি শিক্ষকদের জন্য টিকা বরাদ্দ হয়েছে। আগের দিন কুপন নিয়ে এসেছিলাম। এদিন গিয়ে টিকা নিই। কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাননি শিক্ষক সুজয় মাইতি। তাঁর কথায়, ‘‘কুপন দেওয়া হচ্ছে শুনে টিকাকেন্দ্রে যাই। কিন্তু সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখে ফিরে আসি।’’ পুর এলাকায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে কোথায় টিকার কুপন সংগ্রহ করা যাবে তা নিয়ে বিভ্রান্ত বাসিন্দারা।
পুর এলাকায় কোথায়, কবে টিকা দেওয়া হবে বা তার জন্য কোথায় কুপন দেওয়া হবে তা নিয়ে পুরসভার পক্ষ থেকে প্রচারের দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা।