খেজুরি কলেজে টিকাকরণ শিবির। নিজস্ব চিত্র
পুজোর মরসুম মিটে যাওয়ার পর কলেজ সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারে। তাই জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মেনে সোমবার সমস্ত কলেজে করোনা টিকাকরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়। হাতেগোনা বেশ কয়েকটি কলেজ ছাড়া অধিকাংশ কলেজেই পড়ুয়া এবং অধ্যাপক ও অশিক্ষক-কর্মচারীদের করোনার প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়। এদিন জেলা স্বাস্থ্যদফতরের উদ্যোগে প্রায় ১৪০০০ কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল। তবে কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভেঙে দুই সপ্তাহেরও বেশি জল বন্দি ভগবানপুর, পটাশপুর। জলমগ্ন হয়েছে ময়নাও। ফলে ওই সব এলাকার কলেজগুলিতে করোনার টিকাকরণের কোনও শিবির করা যায়নি বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার অধীন কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজ, দেশপ্রাণ মহাবিদ্যালয়, রামনগর কলেজ, খেজুরি কলেজ, এগরা সারদা শশীভূষণ কলেজে টিকাকরণ হয়। তবে জলমগ্ন মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয়, পালপাড়া যোগদা সৎসঙ্গ কলেজ, বাজকুল মিলনী কলেজে টিকাকরণ শিবির হয়নি। মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার মিশ্র বলেন, "প্রশাসনিক নির্দেশ মেনে শ’চারেক পড়ুয়ার কাছ থেকে করোনার টিকা নেওয়ার আবেদন সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু এলাকার যা পরিস্থিতি তাতে পড়ুয়াদের পক্ষে কোনও মতেই টিকা নিতে আসা সম্ভব নয়। তাছাড়া কলেজেও শিবির আয়োজন করার মতো পরিস্থিতি নেই। তাই পরবর্তী কালে যাতে আর একবার এধরনের শিবির করা যায় সে জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি।’’
জেলার ২১টি কলেজের মধ্যে ১৭টি কলেজে টিকাকরণ শিবির হয়েছে। বন্যার জন্য বাজকুল কলেজ, ময়না কলেজ, মুগবেড়িয়া কলেজ ও পালপাড়া কলেজে শিবির হয়নি। নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ৬৩টি টিকাকরণ শিবির হয়েছিল। মহাত্মা গাঁধী বিশ্ববিদ্যালয় এ দিন টিকাকরণ হয়নি। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কম থাকায় টিকাকরণ শিবির করা যায়নি বলে দাবি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। মহিষাদল রাজ কলেজে ১৬০০ জন ছাত্রছাত্রীকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মহিষাদলের মহিষাদল গার্লস কলেজে ৬০০ ছাত্রীর টিকার ব্যবস্থা ছিল।
কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজে ১,৫০৪ জনকে টিকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাজির হন মাত্র ৬৫৪ জন। দেশপ্রাণ মহাবিদ্যালয়ে ২১১ জনের মধ্যে ৪৬ জন, রামনগর কলেজে ৯৩০ জনের মধ্যে ৪১৬ জন, খেজুরি কলেজে ৭৬৩ জলের মধ্যে ৬০০ জন, নন্দীগ্রাম স্বর্ণময়ী যোগেন্দ্রনাথ কলেজে ১৬১ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা হয়। কিন্তু উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১১৯ জন। নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজে ১,৯৫৮ জনের মধ্যে মাত্র ৩৮২ জন করোনার প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেয় বলে জানা গিয়েছে। নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘‘অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত। তাই মাত্র ছ'টি কলেজে টিকাকরণ শিবির করা গিয়েছে। যাঁরা টিকা নেবেন বলে কলেজগুলির পক্ষ থেকে তালিকা দেওয়া হয়েছিল তাঁদের অর্ধেকই
টিকা নেননি।’’
ময়না কলেজে টিকাকরণ শিবির হয়নি। তবে বাকি কলেজগুলিতে কতজন টিকা নিয়েছে সেই সংক্রান্ত তথ্য রাত পর্যন্ত পৌঁছায়নি বলে পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায় বলেন, ‘‘আমাদের স্বাস্থ্য জেলায় ১৪০০০ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কতজন টিকা নিয়েছেন সেই তথ্য এখন হাতে আসেনি।’’