খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্সে। নিজস্ব চিত্র
করোনায় সঙ্কটের অন্ত নেই। জ্বর, সর্দি, কাশি সঙ্গে শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে রোগী এলেই বিড়ম্বনায় পড়ছেন চিকিৎসকেরা। সরঞ্জামের অভাব তো রয়েছেই। এখন বড় সঙ্কট এমন রোগী পরিবহণের অ্যাম্বুল্যান্স ঘিরেও!
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল-সহ জেলার প্রতিটি হাসপাতালই এই সঙ্কটের শিকার। আইসোলেশনের চারটি শয্যা ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর চিকিৎসায় কোনও পরিকাঠামো নেই খড়্গপুর হাসপাতালে। মেদিনীপুর মেডিক্যালে ‘রেফার’ করতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কথা থাকলেও মেদিনীপুর মেডিক্যালে চালু হয়নি করোনা-পরীক্ষা। এরই মধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা অথবা রেফার হওয়া রোগীকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্স জট দেখা দিয়েছে। এমন রোগীকে নিয়ে যেতে চাইছে না সাধারণ রোগীর পরিবহণে ব্যবহৃত অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। মাতৃযানকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত হলেও তার চালকেরাও নানা অজুহাতে আসছেন না। পরিস্থিতি সামলাতে জেলার প্রতিটি হাসপাতালে দু’টি করে অ্যাম্বুল্যান্স শুধুমাত্র করোনা রোগীর জন্য দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা-ও না পেয়ে দিশেহারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই জেলাশাসক ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে পরিস্থিতি জানিয়ে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েছেন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এখনও করোনার অ্যাম্বুল্যান্স পাইনি। তা ছাড়া অন্য অ্যাম্বুল্যান্স বা মাতৃযানগুলিও এমন রোগীকে নিয়ে যেতে চাইছে না। সমস্যা তো হচ্ছেই।”
গত বুধবারই করোনার যাবতীয় উপসর্গ রয়েছে এমন এক যুবককে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে দ্রুত রেফারের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় অ্যাম্বুল্যান্স। শেষমেশ পুলিশের মাধ্যমে সাধারণ রোগীর পরিবহনে ব্যবহৃত পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্সে মেদিনীপুরে পাঠানো হয় ওই যুবককে। তবে এমন রোগীর পরিবহণের ক্ষেত্রে নানা বিধি মানতে হয়। পুরো অ্যাম্বুল্যান্সটিই জীবাণুমুক্ত করতে হয়। সুপার কৃষ্ণেন্দু বলেন, “ওই অ্যাম্বুল্যান্স পরে স্যানিটাইজ় করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এমন ক্ষেত্রে সাধারণ রোগীর ঝুঁকি থেকে যায়। আতঙ্কও দেখা দিতে পারে।” যদিও খড়্গপুর পুরসভা জানিয়েছে, পরে অ্যাম্বুল্যান্সটি জীবাণুমুক্র করা হয়েছে।
সঙ্কটের এই পরিস্থিতিতে পুরসভার হাতে থাকা একটি অ্যাম্বুল্যান্স খড়্গপুরের করোনা উপসর্গের রোগী পরিবহণে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। খড়্গপুরের পুরপ্রধান তথা বিধায়ক প্রদীপ সরকার বলেন, “আমাদের হাতে আপাতত চারটি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। তার মধ্যে একটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে রয়েছে। ওই অ্যাম্বুল্যান্সটি আমরা খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে দিতে বলেছি।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অ্যাম্বুল্যান্স সঙ্কটে বিভিন্ন ব্লকেও শোরগোল শুরু হয়েছে। খড়্গপুর হাসপাতালের সুপারের চিঠির পরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনও। জেলাশাসকের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, “অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে সত্যিই একটা সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ব্লক, মহকুমা প্রশাসনের মাধ্যমে অ্যাম্বুল্যান্স ধরে প্রতিটি হাসপাতালে দু’টি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তার খরচ জেলা প্রশাসন দেবে। অন্য অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজ়েশনের বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতর দেখবে।”