ঝাড়গ্রাম করোনা হাসপাতাল পরিদর্শনে গোপালকৃষ্ণ ঢালি। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
করোনা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিলেন রাজ্যের করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক গোপালকৃষ্ণ ঢালি। বুধবার ঝাড়গ্রাম করোনা হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন তিনি। এ দিনও হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর হার কমাতে হলে হাসপাতালে রোগীদের নিয়মিত নজরদারি করতে হবে বলে চিকিৎসকদের জানান তিনি। হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্তা দেখেন, এমন কিছু রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে, যাঁদের পরিমিত অক্সিজেন দিতে হবে। অক্সিজেন দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘টাইট রেট’-এ উপযুক্ত নজরদারি প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
গোড়া থেকেই জেলায় করোনা হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ছিল চিকিৎসক সংগঠন ও রোগীর পরিজনদের। করোনা হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুর জেরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রোগীর পরিজনের হাতে নিগৃহীত হন এক চিকিৎসক। ওই ঘটনায় পরিকাঠামোহীন করোনা হাসপাতালের অভিযোগ নিয়ে অবস্থান করেছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এর পরে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাজ্যের করোনা সংক্রান্ত প্রোটোকল মনিটরিং কমিটির সদস্য কৌশিক চাকী হাসপাতাল পরিদর্শন করে পরিকাঠামোগত খামতির বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দেন। সেই প্রস্তাব মেনে সিসিইউ-এর শয্যা সংখ্যা পাঁচ থেকে ১৫ করা হয়। সিলিন্ডারের পরিবর্তে সিসিইউ শয্যাগুলিতে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। শয্যার পাশে রোগীদের প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ক্রিটিক্যাল রেসপন্স অ্যালার্মের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এখনও চারতলা হাসপাতাল ভবনটিতে লিফ্টের ব্যবস্থা নেই। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, লিফ্ট বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তবে করোনায় পর পর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা ১৩। অথচ চিকিৎসক সংগঠনের দাবি, হাসপাতালে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, হাসপাতালের পরিষেবা খতিয়ে দেখতেই এ দিন এসেছিলেন করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক গোপালকৃষ্ণ ঢালি। রোগীদের অক্সিজেন দেওয়ার বিষয়টিতে নজর দিতে বলেন তিনি। হাসপাতাল পরিদর্শনের পরে গোপালকৃষ্ণ ঢালি বলেন, ‘‘মৃত্যুর হার কমানোর জন্য রোগীদের বার বার মনিটরিং করতে হবে। সেটা চিকিৎসকদের বলেছি। বার বার রোগীদের না দেখলে কখন অবস্থা খারাপ হচ্ছে, সেটা বোঝা যাবে না। চিকিৎসকদের আরও সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে আসতে হবে। আমি নিজে মে মাস থেকে রাজ্যের বিভিন্ন করোনা হাসপাতালের সিসিইউতে গিয়ে চিকিৎসকদের অনুপ্রাণিত করছি। যাতে আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া যায়।’’ স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যার অনুপাতে পরিকাঠামো ও পরিষেবা ঠিকই রয়েছে। হাসপাতালে এইচডিইউ (হাই-ডিপেন্ডেন্ট ইউনিট) দু’একদিনের মধ্যে চালু হবে বলে জানান তিনি। প্রসঙ্গত, সিসিইউ-এর রোগীরা কিছুটা ভাল হলে এইচডিইউতে রাখা হয়।