Coronavirus in Midnapore

রিপোর্টের সুপারিশ না মানার নালিশ করোনা হাসপাতালে

সিসিইউ ঘরটিও অপরিসর। ভেন্টিলেটর-সহ সরঞ্জাম থাকলেও সেগুলি ব্যবহারের বিষয়ে কোভিড যোদ্ধারা উপযুক্ত ভাবে প্রশিক্ষিত নন।

Advertisement

 নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০ ০৬:৩৫
Share:

ফাইল চিত্র।

স্থায়ী সুপার নেই। নেই পর্যাপ্ত পরিকাঠামো। অভিযোগ পেয়ে সেই ঝাড়গ্রাম করোনা হাসপাতালে সম্প্রতি পরিদর্শনে এসেছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রোটোকল মনিটরিং কমিটির দুই সদস্য। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে দেওয়া তাঁদের রিপোর্টেও উঠে এসেছে নানা সমস্যার কথা। কিন্তু তারপরেও সেই হাসপাতালে উপযুক্ত পরিষেবা মিলছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন রোগীর পরিজনেরা।

Advertisement

গত শনিবার একসঙ্গে তিন রোগীর মৃত্যু হয়েছিল সেই হাসপাতালে। রবিবার সেখানে মৃত্যু হয় ঝাড়গ্রাম বিশেষ সংশোধনাগারের সুপার গৌরীশঙ্কর বণিকের। সোমবার ফের চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবারও করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। দহিজুড়ির বাসিন্দা তপন ঘোষ (৬২) ও বেলিয়াবেড়ার ভামাল গ্রামের ভাগীরথী তরাই (৬৫) এদিনই বিকেলে ভর্তি হন। সন্ধ্যায় দু'জনেরই মৃত্যু হয়।

ঝাড়গ্রাম জেলায় করোনা হাসপাতাল চালু করা নিয়ে গোড়া থেকেই গড়িমসি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ।

Advertisement

করোনা হাসপাতাল হিসেবে যে চারতলা ভবনটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি তৈরি হয়েছিল জেলা হাসপাতালের নাইট শেল্টার হিসেবে। এপ্রিলে এক ভিডিয়ো বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং নাইট শেল্টারে করোনা হাসপাতালের বিষয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু পরে বড় রাস্তার ধারে সেই নাইট শেল্টারেই করোনা হাসপাতাল হয়।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর সেখানে করোনা রোগীর মৃত্যুর জেরে মৃতের পরিজনের হাতে নিগৃহীত হন এক চিকিৎসক। তারপরে করোনা হাসপাতালের নিরাপত্তা ও পরিকাঠামো উন্নতির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এরপরে ২১ সেপ্টেম্বর সেখানে পরিদর্শনে আসেন রাজ্যে করোনা সংক্রান্ত প্রোটোকল মনিটরিং কমিটির দুই সদস্য অসীম দাসমালাকার ও কৌশিক চাকী। ফিরে গিয়ে তাঁরা রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেন।

জুনে চালু হওয়া ৭৫ শয্যার চার তলা ওই করোনা হাসপাতালে এখনও লিফট নেই। জেলার একমাত্র লেভেল ফোর হাসপাতালটিতে সিসিইউতে মাত্র ৫টি শয্যা। সূত্রের খবর, রিপোর্টে সেই বিষয়গুলি উল্লেখ করেছেন ওই দুই স্বাস্থ্য আধিকারিক। হাসপাতাল পরিচালনায় পরিকাঠামোগত ও পরিকল্পনার খামতি রয়েছে বলেও রিপোর্টে জানিয়েছেন তাঁরা। করোনা হাসপাতাল হলেও সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, সিসিইউতে টাইপ ‘ডি’ সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। সিসিইউ ঘরটিও অপরিসর। ভেন্টিলেটর-সহ সরঞ্জাম থাকলেও সেগুলি ব্যবহারের বিষয়ে কোভিড যোদ্ধারা উপযুক্ত ভাবে প্রশিক্ষিত নন। হাসপাতালে ফোন, ইন্টারকম নেই। নেই ক্রিটিক্যাল অ্যালার্ট রেসপন্স সিস্টেম।

জেলা হাসপাতালের সুপারই করোনা হাসপাতালের বাড়তি দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাই ওই রিপোর্টে করোনা হাসপাতালের জন্য একজন সুপার ও একজন নোডাল অফিসার নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। হাসপাতালের প্রতিটি শয্যার নম্বর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে হাসপাতাল সংলগ্ন আইসোলেশন ওয়ার্ডটির পরিকাঠামো নিয়েও।

যদিও সেখানকার চিকিৎসকদের দাবি, ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে এখনও কোনও কাজই হয়নি।

ওই করোনা হাসপাতালের নতুন একটি ইউনিট তৈরির জন্য রাজ্যে প্রস্তাব দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের কটাক্ষ, ‘‘চালু হাসপাতালটিতেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা অপ্রতুল। নতুন ইউনিট করলেই কী সব সমস্যা মিটবে?’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘করোনা হাসপাতালের বিষয়টি সরাসরি জেলাশাসক দেখছেন। সাধ্যমত পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement