দাসপুরের ওই গ্রামে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র
জেলায় প্রথম এই তল্লাটেই করোনা রোগীর খোঁজ মিলেছিলেন। একই পরিবারের তিন জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রথম করোনা সংক্রমণের এলাকা সেই সেই দাসপুরেই আর নতুন করে কোনও করোনা পজ়িটিভ রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। মুম্বই ফেরত যে যুবকের সূত্রে করোনা এসেছিল গ্রামে, সেই যুবকও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সব মিলিয়ে দাসপুরের ওই গ্রাম তো বটেই, ভয় ভাঙছে গোটা ঘাটাল মহকুমারই।
প্রশাসনের সূত্রের খবর, কয়েকদিন আগে করোনা আক্রান্ত যুবক ও পর্যবেক্ষণে থাকা তাঁর মা বাড়ি ফেরেন। নিয়ম মেনে তাঁরা এখন ঘরবন্দিই আছেন। কোয়রান্টিন থেকে বাড়িতে ফিরেছেন আক্রান্ত যুবকের জেঠু, জেঠিমা, দাদা ও বৌদি। তবে করোনা আক্রান্ত ওই যুবকের বাবা ও স্ত্রী এখনও বেলেঘাটা আইডি-তে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানালেন, করোনা পজ়িটিভ ওই দু’জনই ভাল আছেন। যুবকের বাবা দু’-একদিনের মধ্যে বাড়িও ফিরবেন।
এলাকায় তিন-তিন জন করোনা আক্রান্তের হদিশ মেলার পরে গত কয়েক সপ্তাহ দাসপুরের মানুষজন বিশেষ প্রয়োজনেও বাড়ির বাইরে পা না রাখার চেষ্টা করেছেন। বাজার, মুদি দোকানেও তেমন ভিড় জমেনি। ক্রমশ পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার থেকে একটু একটু করে ভয় ভাঙছে কৃষি প্রধান এই জনপদের। তবে সচেতন রয়েছেন সকলেই। সরকারি নির্দেশে গ্রামের সবাই মাস্ক ব্যবহার করছেন। গ্রামের মুদি দোকান খুলেছে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাসিন্দারা তেল-মশলা কিনছেন। লকডাউনে কৃষিকাজে ছাড় থাকায় কেউ ধান জমিতে যাচ্ছেন, কেউ আবার গ্রীষ্মকালীন আনাজ চাষে মন দিয়েছেন।
পুকুরে নেমে মাছ ধরছেন অনেকে। আনাজ বা ওষুধের প্রয়োজনে গ্রামের বাইরেও যাচ্ছেন অনেকে। তবে সংক্রমিত এলাকা হওয়ায় মিড ডে মিলের চাল-আলু সংগ্রহ করতে স্কুলে যেতে পারবেন না এই তল্লাটের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। প্রশাসনের উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতেই চাল-আলু পৌঁছে দেওয়া হবে।
জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “নতুন করে কোনও করোনা পজ়িটিভ নেই। তাই গ্রামবাসীদের কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে।” তবে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল হলেও পুলিশের নজরদারি চলছে পুরোদমে। পাড়ায় পাড়ায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের বাড়তি নজর রয়েছে। দাসপুরের ওই গ্রামের মোড়ে এখনও আছে পুলিশ ক্যাম্প। গ্রাম লাগোয়া আরও দুই মোড়ে চলছে পুলিশের নাকা। অন্য গ্রামের কাউকে এখনও এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। গ্রামের বাসিন্দারা কোথায়, কী প্রয়োজনে যাচ্ছেন তা পুলিশকে জানিয়েই যাচ্ছেন।
এই কড়াকড়ি মানতে অবশ্য কোনও আপত্তি নেই গ্রামবাসীর। তাঁরা বলছেন, নিয়ম মানলেই তো দ্রুত ছন্দে ফেরা সম্ভব।