প্রতীকী ছবি।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল ঝাড়গ্রাম জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার। মৃত সুবোধ মণ্ডল জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ-২ পদে ছিলেন। বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। তাঁর বাড়ি নদিয়া জেলার হাঁসখালি থানার বগুলায়। সোমবার দুপুরে কলকাতার একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
ওই স্বাস্থ্যকর্তার কিডনির সমস্যা ছিল। ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটিতে প্রতি সপ্তাহে ডায়ালিসিস করাতেন তিনি। এ ছাড়াও হৃদ্রোগ সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। জেলা সুপার স্পেশালিটির ডায়ালিসিস ইউনিটের দু’জন টেকনিশিয়ান কিছুদিন আগে করোনা আক্রান্ত হন। গত ২৬ অগস্ট সুবোধ ডায়ালিসিস করাতে এসেছিলেন। নিয়ম মতো র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় তাঁর করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ে। রিপোর্ট পজ়িটিভ হতেই গাড়ি নিয়ে চম্পট দেন চালক। হেঁটে জরুরি বিভাগের সামনে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুবোধ। শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। গোঙানির শব্দ শুনে পৌঁছন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক। সংজ্ঞা হারান সুবোধ। ট্রলিতে শুইয়ে চিকিৎসা হয়। জ্ঞান ফেরার পর সুবোধ জানান তিনি করোনা পজ়িটিভ। সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই চিকিৎসক। অভিযোগ, হাসপাতাল সুপার জানিয়ে দেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের (জেলাশাসক আয়েষা রানি এবং সিএমওএইচ প্রকাশ মৃধা) অনুমতি ছাড়া করোনা হাসপাতালে ভর্তি করানো যাবে না। টানাপড়েন চলতে থাকে। শেষপর্যন্ত জেলাশাসক এবং সিএমওএইচ-এর অনুমতি নিয়ে ২৬ অগস্ট সন্ধ্যায় ওই স্বাস্থ্যকর্তাকে ঝাড়গ্রাম করোনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, সে সময় অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় ২৬ অগস্টের রাতেই তাঁকে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে রেফার করা হয়। ২৭ অগস্ট ওই চিকিৎসক রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিবকে ই-মেল মারফত পুরো বিষয়টি জানান। জরুরি বিভাগের ওই চিকিৎসকের ই-মেলের চিঠি ফাঁস হয়ে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত শনিবার ডেপুটি সিএমওএইচ-কে পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সোমবার দুপুর ১টা ২০ নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে, ‘সিভিয়ার কোভিড-১৯ ডিজিজ অ্যান্ড অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি ব্যাকগ্রাউন্ড অফ ডায়াবিটিস ম্যালিটাস, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, ইসকিমিক হার্ট ডিজিজ’।
ওই স্বাস্থ্যকর্তার স্ত্রীও করোনা আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেশনে ছিলেন। পরে তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ হয়। সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের গাফিলতির কারণে করোনাযোদ্ধা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পরিষেবা দিচ্ছেন। সেই করোনা যোদ্ধারা আক্রান্ত হলেও বিভাগীয় গাফিলতির কারণে তাঁদের প্রাণ খোয়াতে হচ্ছেন। ওই স্বাস্থ্য কর্তার মৃত্যু এই ঘটনার বাস্তব প্রমাণ। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের গাফিলতিতে ওই স্বাস্থ্য কর্তার চিকিৎসা অনেক দেরিতে শুরু হয়েছিল।’’ অভিযোগ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।