প্রতীকী ছবি
পশ্চিম মেদিনীপুরে করোনা সংক্রমণ থেমে নেই। কিন্তু কমছে নমুনা পরীক্ষার হার। এক সময়ে দিনে গড়ে ৬০০ নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল জেলায়। তখন লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে দিনে গড়ে ৭০০-৮০০ নমুনা সংগ্রহও হয়েছে। সেটাই এখন কমে হয়েছে দিনে গড়ে ৪০০-৪৫০। সম্প্রতি বেশ কিছু রিপোর্ট আবার অসম্পূর্ণও আসছে। এই পরিস্থিতিতে জেলায় দিনপিছু নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ তেমন কমেনি। যেখানে যেমন প্রয়োজন, সেখানে তেমন নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে।’’ জেলা স্বাস্থ্যভবনের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, এক সময় জেলায় অনেক পরিযায়ী শ্রমিক ফিরছিলেন। তাই তখন বেশি নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন ছিল। এখন ঘরমুখী পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে। স্বাভাবিকভাবেই নমুনা সংগ্রহ কমেছে। ওই সূত্র জানাচ্ছে, এখন সংক্রমণ-প্রবণ কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত করে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরফলে, দিনে নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ আবার বাড়বে।
জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকেরও ব্যাখ্যা, ‘‘এখন দিনে যে পরিমাণ নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে, প্রায় সেই পরিমাণই পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে, ‘ব্যাকলগ’ থাকছে না। নমুনা জমে থাকার সমস্যাও হচ্ছে না।’’ তিনি জানান, এখন যে সব পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে উপসর্গ মিলছে, তাঁদের নমুনাই পরীক্ষায় পাঠানো হচ্ছে। এতে পরীক্ষার চাপও অনেকটা কমছে।
তবে স্বাস্থ্য দফতরের ব্যাখায় সন্তুষ্ট নয় বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের কথায়, ‘‘জেলায় নমুনা পরীক্ষা দ্রুত হারে বাড়ানো দরকার।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৌমেন খান বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আরও বেশি নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরাই। তাই নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো উচিত।’’
একাধিক মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, খড়্গপুরে বিদায়ী উপপুরপ্রধান করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তাঁদের করোনা পরীক্ষার দাবি তুলেছিলেন সেখানকার পুরকর্মীরা। যে দাবিকে মান্যতা দিয়েছে প্রশাসনও। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি অবশ্য বলছেন, ‘‘জেলায় নমুনা সংগ্রহ তেমন কমেনি। যেখানে যে পদক্ষেপ করার স্বাস্থ্য দফতর করছে।’’ একই দাবি জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্রেরও।
স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন জানাচ্ছে, ১৭ জুন থেকে ২৬ জুন— এই দশ দিনে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩৮ জন করোনা সংক্রমিতের হদিশ মিলেছে। ১৭ জুন পর্যন্ত জেলায় করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৩১৬। ২৬ জুন ওই সংখ্যাই বেড়ে হয়েছে ৩৫৪। জেলা স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, সংক্রমিতের বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক। দেখা যাচ্ছে, প্রায় দিনই বেশ কিছু নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট ‘ইনকনক্লুসিভ’ অর্থাৎ অসম্পূর্ণ আসছে। ওই রিপোর্ট নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পৌঁছনো যাচ্ছে না।
এক সূত্রে খবর, শুক্রবার দাসপুরের ৮ জনের রিপোর্ট অসম্পূর্ণ এসেছে। বৃহস্পতিবার ২০ জনের রিপোর্ট অসম্পূর্ণ এসেছে। এরমধ্যে দাসপুরের ১৫ জন, খড়্গপুরের ৫ জন ছিলেন। বুধবারও দাসপুরের ৫ জনের রিপোর্ট অসম্পূর্ণ এসেছে। মঙ্গলবার ২০ জনের করে রিপোর্ট অসম্পূর্ণ এসেছিল। ‘পুল টেস্টে’ রিপোর্ট অসম্পূর্ণ এলে ফের পৃথকভাবে নমুনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু জানান, পুরো পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। রিপোর্ট ‘ইনকনক্লুসিভ’ অর্থাৎ অমীমাংসিত এলে ফের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।