Coronavirus in Midnapore

পরপর রোগী মৃত্যুর জের! বন্ধ হচ্ছে এক করোনা হাসপাতাল

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগও উঠছিল। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এর জেরেই হাসপাতালটি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ০২:১৬
Share:

প্রতীকী ছবি

বন্ধ হচ্ছে মেদিনীপুরের একটি করোনা হাসপাতাল (লেভেল- ২)। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, যা গতিপ্রকৃতি তাতে আগামী ১ জুলাই হাসপাতালটি বন্ধ হবে। ওই দিন থেকে এখানে আর করোনা আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন— কাউকেই ভর্তি নেওয়া হবে না। মেদিনীপুর শহরতলির মোহনপুরের কাছে এই হাসপাতালে পরপর রোগীর মৃত্যু হচ্ছিল। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগও উঠছিল। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এর জেরেই হাসপাতালটি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Advertisement

তবে এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে নারাজ জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলের বক্তব্য, ‘‘সব দিক দেখে যা পদক্ষেপ করার করা হচ্ছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে এখনই কিছু বলছি না। যখন বলার নিশ্চয়ই বলব।’’ জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি মেদিনীপুরে জেলা স্বাস্থ্য সমিতির বৈঠকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। উপস্থিত সকলেই হাসপাতাল বন্ধের ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। ওই বৈঠকে ছিলেন জেলাশাসক, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু প্রমুখ।

হাসপাতাল বন্ধের কারণ হিসেবে পরপর মৃত্যুর প্রসঙ্গ এড়িয়ে প্রশাসনের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, শালবনির করোনা হাসপাতালে (লেভেল- ৪) আরও বেশি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন। তাই মেদিনীপুরের ওই হাসপাতাল বন্ধ করা হচ্ছে। একই দাবি জেলা স্বাস্থ্যভবনের এক সূত্রেরও। ওই সূত্রের মতে, শালবনির হাসপাতালটি ১৫০ শয্যা করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাই মেদিনীপুরের ওই করোনা হাসপাতালে মেদিনীপুর মেডিক্যালের যে সব চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করেন, তাঁদের শালবনি সুপার স্পেশালিটিতে পাঠানো হবে।

Advertisement

প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, রবিবার পর্যন্ত জেলায় করোনা সংক্রমিত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মেদিনীপুরের করোনা হাসপাতালে (লেভেল- ২) মৃত্যু হয়েছে আরও কয়েকজনের। এখানে মৃতদের বেশিরভাগেরই করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ ছিল। করোনা সংক্রমিত না হয়েও কেন পরপর মৃত্যু, প্রশ্ন ওঠে। মৃত্যুর হার পর্যালোচনা করতে গিয়ে এক সময়ে দেখা গিয়েছিল, মেদিনীপুরের এই হাসপাতালেই মৃত্যুর হার সবথেকে বেশি, প্রায় ১৩ শতাংশ! অর্থাৎ, ১০০ জন রোগী ভর্তি হলে সুস্থ হচ্ছিলেন ৮৭ জন, মৃত্যু হচ্ছিল ১৩ জনের। যেখানে অন্য করোনা হাসপাতালে মৃত্যুর হার ছিল ৪-৬ শতাংশ। বেশি রোগী মৃত্যুর খবর পৌঁছয় রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তরেও। জানা যায়, টিম-পিকেও এ ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিল। স্বাস্থ্য দফতরের এক ভিডিয়ো বৈঠকে এই লেভেল-২ হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতি। বৈঠকে অজিত না কি বলেছিলেন, ‘‘সব দেখেশুনে তো মনে হচ্ছে, ওখানে সুপারি কিলার আছে!’’

ঘটনাচক্রে এই আবহেই বদলির নির্দেশ এসেছিল জেলার তৎকালীন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার। গিরীশচন্দ্রকে আলিপুরদুয়ারের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক করে পাঠানো হয়েছে। তবে কি মেদিনীপুরের করোনা হাসপাতালে (লেভেল- ২) পরপর রোগী মৃত্যুর জেরেই ‘আকস্মিক’ বদলি হয়েছেন গিরীশচন্দ্র— জল্পনা রয়েছে জেলায়। ওই হাসপাতালে মৃত্যু অবশ্য থেমে নেই। গত সপ্তাহেও এখানে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। দু’জনের কেউই করোনা সংক্রমিত ছিলেন না।

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, করোনা আক্রান্তদের জন্য জেলায় পর্যাপ্ত শয্যাই থাকছে। লেভেল-১ (আয়ুষ) হাসপাতালে ৫০টি শয্যা রয়েছে। আর শালবনির (লেভেল- ৪) হাসপাতালে ১৫০টি শয্যা থাকছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় ২০০টি শয্যা কম নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement