অনলাইনেই আশীর্বাদ ভাগ্নেকে।
মামা রয়েছে কয়েকশো কিলোনিটার দূরে। লড়ছেন করোনা-যুদ্ধে। সেই লড়াইয়ের ফাঁকেই ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে ভাগ্নের অন্নপ্রাশনের সমস্ত মাঙ্গলিক কাজ সারলেন তিনি।
কোলাঘাটের পরমানন্দপুরের বাসিন্দা শুভেন্দু পট্টনায়ক পেশায় হাসপাতালের ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান। কর্মসূত্রে রয়েছেন কোচবিহার গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজে। সোমবার ছিল তাঁর ভাগ্নে অর্চিতের অন্নপ্রাশন। বাড়ির ছোট ছেলে অর্চিতের অন্নপ্রাশন খুব ধুমধাম করে সারবেন ভেবেছিলেন কেশাপাটের বাসিন্দা অনিত মান্না। লকডাউনের জেরে বড়সড় জমায়েতের ওপরে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তার উপরে অন্নপ্রাশনের মতো অনুষ্ঠানের অপরিহার্য আত্মীয় অর্চিতের মামা শুভেন্দু রয়েছেন উত্তরবঙ্গে। এই সময় তিনি বাড়িতে ফিরতেন পারবেন না। তাই এ দিন তিনি কর্মস্থলে বসেই হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে পুরোহিতের বলে দেওয়া মন্ত্রও উচ্চারণ করলেন মামা। প্রাণভরে ভাগ্নেকে করলেন আশীর্বাদ। আর মাঙ্গলিক ক্রিয়া শেষে শুভেন্দুর অনুরোধে অর্চিতকে পায়েস খাওয়ালেন তার দাদু অর্থাৎ শুভেন্দুর বাবা শীতলচন্দ্র পট্টনায়ক।
বছর সাতষট্টির শীতল হৃদরোগী। শুভেন্দুর মা মায়ারানি পট্টনায়ক মানসিক রোগী। ইচ্ছে থাকলেও লকডাউনে অসুস্থ বাবা, মা'কে দেখতেও আসতে পারেননি শুভেন্দু। সংসার সামলাচ্ছেন শুভেন্দুর স্ত্রী প্রীতি। করোনা লড়াইয়ে শুভেন্দুর এই সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানিয়েছেন শুভেন্দুর জামাইবাবু তথা ছোট্ট অর্চিতের বাবা অনিত। তিনি বলেন, ‘‘যেভাবে রাজ্যে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে তাতে উনি বাড়ি না এসে ঠিকই করেছেন। এই সময় একজন স্বাস্থ্যকর্মী ছুটি নেওয়া মানে করোনা চিকিৎসায় কিছুটা হলেও সমস্যা তৈরি হওয়া।’’ আর শুভেন্দুর কথায়, ‘‘লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে বাড়ি যায়নি। ছুটিও নিইনি। এই সময় পরিবারের থেকে কর্তব্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। আমার পরিবারের সবাই আমার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। ভাগ্নের অন্নপ্রাশন অনলাইনে সারলাম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাড়ি গিয়ে ওকে খুব আদর করব।’’