প্রতীকী ছবি
প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মানুষকে বাঁচাতে তাঁদের আশ্রয় দিতে শঙ্করপুরে তৈরি হয়েছিল ফ্লাড রেসকিউ সেন্টার। যখন প্রাকৃতিক বিপর্যয় থাকে না সেই সময় যাতে ওই সেন্টার রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য তা অতিথি নিবাস হিসাবে ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি। যা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। বিতর্ক উঠেছে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ওই ফ্লাড রেসকিউ সেন্টার ভাড়ায় নেওয়ার জন্য নিলাম ডাকার সিদ্ধান্তকে ঘিরেও।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামনগর-১ ব্লকের শঙ্করপুরে কয়েক বছর আগে একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্র তৈরি হয়েছিল। পরে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সেটিকে ঘূর্ণিঝড় কিংবা কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় ছাড়া পর্যটকদের থাকার কাজে বাণিজ্যিক হিসেবে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতিকে ব্যবহার করতে বলা হয়। তার নাম দেওয়া হয় 'উদ্ভাস'। যদিও প্রাক্তন বিধায়ক এবং সিপিএম নেতা স্বদেশ নায়কের অভিযোগ, মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে এলাকার বাসিন্দারা ওই বিপর্যয় মোকাবেলা কেন্দ্রে আশ্রয় পাননি। তাঁদের স্থানীয় একটি বেসরকারি লজে রাখতে হয়েছিল।’’ এমন পরিস্থিতিতে সরকারি উদ্যোগে তৈরি ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলা কেন্দ্র পর্যটকদের স্বার্থে বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়ার ব্যাপারে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলা কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ পঞ্চায়েত সমিতিকে সামলাতে হয়। তাই তারা গত ১৬ জানুয়ারি ভবনটি বাণিজ্যিক কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পঞ্চায়েত সমিতির অর্থ স্থায়ী সমিতির সভায় এর জন্য নিলাম ডাকার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সে বার নিলামে কেউ অংশ নেয়নি। ফের গত ২ জুলাই পঞ্চায়েত সমিতির অর্থ স্থায়ী কমিটির সভায় ওই ভবন নিলামের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই মতো ১৬ জুলাই বিডিও অফিসে প্রকাশ্য নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। বার্ষিক দু লক্ষ টাকা চুক্তির বিনিময়ে ভবনটি হস্তান্তর করতে চেয়েছিল পঞ্চায়েত সমিতর। কিন্তু মাত্র একজন নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। সরকারি নিয়মে কোনও নিলাম প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম তিনজনের যোগদান বাধ্যতামূলক। ফলে ওই নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করে ব্লক প্রশাসন।
রামনগর-১ এর বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, ‘‘নিলামে একজন মাত্র অংশ নেওয়ায় তা বাতিল করা হয়। ফের কবে নিলাম ডাকা হবে তা অর্থ স্থায়ী সমিতির সভা ডেকে চূড়ান্ত করবে পঞ্চায়েত সমিতি।’’ প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের জেলা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে স্থানীয়দের ওই ভবনে আশ্রয় দেওয়া হবে। তবে তার রক্ষণাবেক্ষণ এবং কর্মীদের বেতন মেটানোর জন্য অর্থ লাগে। সে জন্যই বাণিজ্যিক স্বার্থে ভবনটিকে বছরের বাকি সময়ে পঞ্চায়েত সমিতিগুলিকে কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। তবে, আমপানে ওই ভবনে স্থানীয়দের আশ্রয় না পাওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে।’’
রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী শম্পা পাত্র বলেন, ‘‘জুলাই মাসের শুরুতে স্থানীয় ভাবে করোনা সংক্রমণ সেরকম ছিল না। তাই নিলাম ডাকার সিদ্ধান্ত হয়। পরে করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠায়, নির্ধারিত দিনে নিলাম স্থগিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছি। তবে কোনও লিখিত বিজ্ঞপ্তি দিইনি।’’ আমপানে ওই ভবনে স্থানীয়দের আশ্রয় না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমপানের দিন ওখানে অনেক রাত পর্যন্ত আশ্রয়কারীদের সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নিয়েছি।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)