প্রতীকী ছবি।
ভর্তির জন্য অগ্রিম ২ লক্ষ টাকা সময়মত দিতে না পারায় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুল্যান্সে পড়ে থেকে মৃত্যু হয়েছিল তমলুকের করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের। দিন কয়েক আগের ওই ঘটনার পর এ বার তমলুক জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার করা এক করোনা আক্রান্তকে পাঁশকুড়া বড়মা করোনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেও ভর্তি নিয়ে টালবাহানায় অ্যাম্বুল্যান্সে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল।
কার্যত বিনা চিকিৎসায় ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর দায় নিয়ে তমলুক জেলা হাসপাতাল ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের চাপান উতোর শুরু হয়েছে। শনিবার রাতের ঘটনার পর বৃদ্ধের মৃতদেহ তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসার পরেও বেশ কয়েকঘণ্টা অ্যাম্বুল্যান্সে পড়ে ছিল বলে পরিবারের অভিযোগ। রবিবার সকালে মৃতদেহ জেলা হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।
স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পাঁশকুড়ার গোগ্রাস এলাকার বছর পয়ষট্টির ওই বৃদ্ধ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় অসুস্থ হওয়ায় পরিবার তাঁকে শনিবার সকালে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আইসোলেশনে রাখার পর তাঁর করোনা পরীক্ষার জন্য র্যাপিড আন্টিজেন টেস্ট করা হয় ও আরেকটি নমুনা কলকাতায় পাঠানো হয়। ওই দিন রাত ৮ টা নাগাদ জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারের লোককে জানান বৃদ্ধের করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছে। তাঁকে পাঁশকুড়া বড়মা হাসপাতালে রেফার করা হয়। বৃদ্ধের বউমা বলেন, ‘‘শ্বশুরমশাইকে রাত সাড়ে ১০ টা নাগাদ বড়মা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা অবস্থায় ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক রোগীকে দেখে জানান অবস্থা সঙ্কটজনক। কিন্তু হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে শয্যা খালি নেই। তাই তাঁকে সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তির কথা বলা হয়। না হলে চণ্ডীপুর করোনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।’’ বউমার অভিযোগ, ‘‘তমলুক জেলা হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছিল বড়মা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখানে তারা ভর্তি নেবে। কিন্তু বড়মায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি না নেওয়ায় অ্যাম্বুল্যান্সেই পড়ে থেকে চিকিৎসা না পেয়ে একঘণ্টা পরে মৃত্যু হয় শ্বশুরমশাইয়ের।’’
তমলুক জেলা হাসপাতাল সুপার গোপাল দাস বলেন, ‘‘গত বৃহস্পতিবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশ দিয়েছিল সন্ধ্যে ৬ থেকে পরদিন সকাল ৬ টা পর্যন্ত করোনা আক্রান্তদের জেলা হাসপাতাল থেকে করোনা হাসপাতালে পাঠানো যাবে না। কিন্তু বৃদ্ধের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় বড়মা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই তাঁকে পাঠানো হয়েছিল।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডলের দাবি, ‘‘ওই বৃদ্ধকে তমলুক জেলা হাসপাতাল থেকে শনিবার রাতে বড়মায় পাঠানোর আগে কিছুই জানানো হয়নি। বৃদ্ধের অবস্থা সঙ্কটজনক হলেও বড়মায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে শয্যা খালি ছিল না। তাই বলা হয়েছিল সাধারণ বিভাগে ভর্তির জন্য বা চণ্ডীপুর করোনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রোগীর পরিবার বড়মায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তির জন্য অনড় থাকেন। সেই অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্সে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। ঘটনাটি দুঃখজনক।’’