তৎপর: রেলের নিভৃতবাস কেন্দ্রে জীবাণুনাশক স্প্রে। নিজস্ব চিত্র
দিল্লি থেকে ফিরে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন খড়্গপুর রেল ডিভিশনের ৯জন আরপিএফ জওয়ান। তাঁদের ৬জন আবার খড়্গপুরেই ছিলেন। এই সব আক্রান্তদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংস্পর্শে আসা সকলকেই নিভৃতবাসে (কোয়রান্টিন) পাঠানো শুরু করেছে রেল। শুক্রবার রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ জানান, দিল্লি ফেরত ২৮ জন রেলরক্ষীর মধ্যে ৬জনের খোঁজ মিলছে না। তা চিঠি লিখে স্বরাষ্ট্র দফতরকে জানানো হয়েছে। আরপিএফের ডিজিরও সাহায্য চাওয়া হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে বাইরে থেকে যাতে কোনও জওয়ান না আসেন, তা-ও দেখতে বলা হয়েছে।
একলপ্তে খড়্গপুরের ৬জন রেলরক্ষীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর জানা যায় বৃহস্পতিবার। তারপর রাতেই সিল করে দেওয়া হয় নিউ সেটলমেন্টে রেলের নিভৃতবাস কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা। ওই কেন্দ্রেই ছিলেন এই রেলরক্ষীরা। সিল করে দেওয়া হয় নিমপুরা যাওয়ার রাস্তা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শহরে আরপিএফের বিভিন্ন অফিস। সতর্কতা জারি হয়েছে আরপিএফ ব্যারাকেও। করোনা আক্রান্ত রেলরক্ষীদের সংস্পর্শে যে সব জওয়ান ও আধিকারিক এসেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে। নতুন করে ১২০জনকে নিভৃতবাসে পাঠানো হচ্ছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। শঙ্কিত আরপিএফ কর্মীদের অনেকে আবার নিজেরাই গৃহ পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। শহরের আরপিএফ কর্মী শ্রীকান্ত মুসিব বলেন, “একটু তো ভয় লাগছেই। নিজেকে নিয়ে নয়, বাড়ির বাচ্চাটার জন্য ভয় বেশি।” নিউ সেটলমেন্টের রেলকর্মী পি জগন্নাথ রাওয়ের বক্তব্য, “সামনেই এই কোয়রান্টিন কেন্দ্র হওয়ায় আতঙ্ক রয়েছে। তাই নিজেরাই কলোনির রাস্তা আটকে দিয়েছি।” রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল সিকিউরিটি কমিশনার বিবেকানন্দ নারায়ণ বলেন, “করোনায় আক্রান্ত আমাদের কর্মীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংস্পর্শে আসা ১২০জনকে চিহ্নিত করেছি। তাঁদের নিউ সেটলমেন্টে কোয়রান্টিন কেন্দ্রেই রাখা হবে। কয়েকটি অফিস বন্ধ করা হয়েছে।”
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা আক্রান্ত ৬জন রেলরক্ষীর মধ্যে নিমপুরার পোস্টের এক জন, খড়্গপুর পোস্টের দু’জন, মেদিনীপুর পোস্টের এক জন, ঘাটশিলা পোস্টের এক জন ও পাঁশকুড়া পোস্টের এক জন জওয়ান রয়েছেন। ফলে, ডিভিশনের সদর খড়্গপুর ছাড়াও পাঁশকুড়া, মেদিনীপুর, উলুবেড়িয়া পোস্টের বেশ কয়েকটি অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেদিনীপুরে ১৪জন আরপিএফ জওয়ানকে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে। অবশ্য শহরে এ দিন বেশ কয়েকটি অফিস খোলা থাকলেও অধিকাংশ আরপিএফ জওয়ানকে দেখা যায়নি। খড়্গপুর রেল ডিভিশনে এই মুহূর্তে তেরোশো আরপিএফ কর্মী ও আধিকারিক রয়েছেন। শুধু খড়্গপুর শহরেই প্রায় ৬০০জন আরপিএফ কর্মী রয়েছেন। এমন ঘটনায় আরপিএফ কর্মী সংখ্যা কমে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে মাঠে নেমেছে রেল পুলিশ (জিআরপি)। প্রয়োজন বুঝে আরপিএফকে সাহায্য করছে তাঁরা। রেল পুলিশের সুপার অবদেশ পাঠক বলেন, “এখন তো ট্রেনে এসকর্টের প্রয়োজন হচ্ছে না। তাই স্টেশন, রাজ্য সীমানায় নজরদারিতে যেখানে আরপিএফের কর্মী সঙ্কট দেখা দিচ্ছে সেখানে আমরা সাহায্য করছি। পরিস্থিতির দিকেও নজর রাখছি।” ঘটনা মেনেছেন রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল সিকিউরিটি কমিশনারও।
নতুন করে নিভৃতবাসে যাওয়া লোকেদের মধ্যে ১০জনের লালারসের নমুনা করোনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছে রেল। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “এলাকা সিল করা বা কারা সংস্পর্শে এসেছিলেন তা রেলের পাশাপাশি পুলিশও দেখছে। রেল নমুনা সংগ্রহ করে দিলে আমরা সেগুলি পরীক্ষা করব।”