লকডাউন ঘোষণার পর তমলুকের বড় বাজার। সোমবার সকালে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
সোমবার সকাল ৭টা। তমলুক শহরের একটি শপিংমলের দরজা খোলার আগেই সামনে ব্যাগ হাতে ১৫-২০ জন ক্রেতার লাইন। শপিংমলের দরজা খুলতেই চাল, ডাল, আটা, ময়দা, আলু, পেঁয়াজ-সহ আনাজ কেনার হিড়িক পড়ল। মলে একসঙ্গে ২০ জনের বেশ ঢোকা বারণ। তাই বাইরে অপেক্ষমাণ ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকল।
সকাল ৮টা। তমলুক শহরের বড়বাজারের আনাজ, মাছ, মাংসের দোকানেও উপচানো ভিড়। করোনা সতর্কতায় সামাজিক দূরত্ব বজায়ের বিধি-নিষেধ উড়িয়েই ঠেসাঠেসি করে জিনিসপত্র কিনছেন বাসিন্দারা।
সকাল ৯টা। কাজের সূত্রে ভিন্ রাজ্য ও অন্য জেলায় থাকা লোকজনের বাড়ি ফেরার জন্য মরিয়া লড়াই দেখা গেল মেচেদা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়কে। কলকাতা থেকে দিঘা, এগরা প্রভৃতি দূরপাল্লার রুটের অধিকাংশ বেসরকারি বাসই এ দিন বন্ধ ছিল। সরকারি বাসের সংখ্যাও ছিল কম। হাতের কাছে যে বাস পেয়েছেন, তাতেই ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। নিয়ম ভেঙে বহু মানুষ বাসের ছাদেও উঠেছেন।
এ দিন বিকেল থেকে লকডাউন হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুকে। লকডাউন-পর্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, ওষুধের দোকান খোলা রাখার ঘোষণা করা হলেও মানুষজনের ভয় কাটছে না। তাই সকাল থেকেই জিনিস মজুত করার ভিড় জমে দোকানে দোকানে। তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড়ের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুধাংশুশেখর বলছিলেন, ‘‘করোনার সতর্কতায় বাড়ির বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হচ্ছে। দোকানদাররা যে দোকান খোলা রাখবেন তার নিশ্চয়তা কোথায়। তাই আপাতত এক সপ্তাহের খাবার কিনে রাখছি।’’
ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই মাছের দাম এ দিন বেশ চড়া ছিল। বাজারে ভিড় জমানো ক্রেতারা জানান, ১৫০ টাকা দরের ছোট রুই মাছ ২০০ টাকায়, ৬০০ টাকার চিংড়ি মাছ ৮০০ টাকায়, ২৫০ টাকার মৌরলা মাছ ৩৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও সকাল ১০টার মধ্যেই বাজারে মাছ শেষ হয়ে যায়। লকডাউনের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য ভিড় থাকায় তমলুক বড়বাজারের অধিকাংশ মুদি দোকান দুপুর দু’টো পর্যন্ত খোলা ছিল। আবার কিছু মুদি দোকান সারাদিন খোলা রাখা হয়েছিল। বড়বাজারের মুদি দোকানি কৃষ্ণেন্দু নাগ বলেন, ‘‘সকাল ৭টায় দোকান খোলার পর থেকেই ক্রেতাদের ভিড় ছিল। অনেকেই বেশি করে জিনিসপত্র কিনেছেন। ভিড় থাকায় অন্য দিনের মতো দুপুরে দোকান বন্ধ করা হয়নি। তবে লকডাউনের আওতা থেকে মুদি দোকান বাদ থাকায় রাত পর্যন্ত দোকান খোলা থাকবে।’’
লকডাউন নিয়ে সকাল-বিকেল প্রশাসনের তরফে প্রচার করা হলেও এ দিন বিকেল ৫ টার পরে তমলুক শহরের বড়বাজারে আনাজ ও মুদির দোকানে যথেষ্ট ভিড় ছিল। রাস্তায় টোটো ও বাইকে অনেকে যাতায়াতও করেছেন। তবে বিকেল ৫টার পর সড়কে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বড়বাজারের ওষুধ দোকানদার বিকাশ প্রামাণিক বলেন, ‘‘লকডাউন নিয়ে প্রশাসনের তরফে মাইক প্রচার করে সতর্ক করা হলেও পুলিশ-প্রশাসনের তরফে নজরদারির ব্যবস্থা না থাকায় টোটো, বাইক চলেছে।’’ অভিযোগ, সিভিক ভলান্টিয়াররা মানুষজনকে বোঝালেও অনেকেই ঘরে ঢুকতে রাজি হননি। জেলাশাসক পার্থ ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘জেলার যে সব এলাকায় লকডাউন হয়েছে, সেখানে প্রচার করা হয়েছে। লকডাউনের পরও ভিড়ের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। সে রকম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’