Coronavirus

ছেলের সূত্রে আক্রান্ত বাবা, করোনা পরীক্ষা স্ত্রী, মায়েরও

দাসপুরের ওই যুবকের বছর পঞ্চাশের বাবা বুধবার থেকেই ভর্তি ছিলেন মেদিনীপুরের করোনা হাসপাতালে। যুবকের স্ত্রী ও মা-ও এখন শহরতলির ওই করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল,মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০ ০২:২৪
Share:

তৎপর: করোনা আক্রান্ত যুবকের স্ত্রী ও মাকে নিয়ে যাওয়ার পরে জীবাণুনাশক স্প্রে সড়বেড়িয়া কোয়রান্টিন কেন্দ্রে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

আশঙ্কা ছিল। তা সত্যি করেই মুম্বই ফেরত দাসপুরের করোনা আক্রান্ত যুবকের বাবাও এ বার করোনায় আক্রান্ত হলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে পাঠানো হয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। ওই যুবকও গত মঙ্গলবার থেকে ভর্তি আছেন আইডি-তে। পরিস্থিতি দেখে ওই যুবকের স্ত্রী এবং মায়েরও করোনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতে দাসপুরের সড়বেড়িয়া কোয়রান্টিন কেন্দ্র থেকে ওই যুবকের মা ও স্ত্রী-কে মেদিনীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

Advertisement

দাসপুরের ওই যুবকের বছর পঞ্চাশের বাবা বুধবার থেকেই ভর্তি ছিলেন মেদিনীপুরের করোনা হাসপাতালে। যুবকের স্ত্রী ও মা-ও এখন শহরতলির ওই করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সূত্রের খবর, করোনা পরীক্ষার জন্য এ দিনই ওই দু’জনের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। স্ত্রীর বয়স ২৩ বছর, মায়ের বছর চুয়াল্লিশ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘ওই যুবকের বাবাকে বেলেঘাটা পাঠানো হয়েছে। স্ত্রী এবং মা মেদিনীপুরে করোনা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ওঁদেরও করোনা পরীক্ষা হবে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত ওই দু’জনের শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘সন্দেহজনক কিছু দেখলেই দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’

দাসপুরের ওই যুবক গত ২২ মার্চ জনতা কার্ফুর দিন কুরলা এক্সপ্রেসে মুম্বই থেকে পাঁশকুড়ায় এসে নামেন। পরে দাসপুরের গ্রামে ফেরেন তিনি। ২৮ মার্চ জ্বর, সর্দি-সহ নানা উপসর্গ নিয়ে ওই যুবক দাসপুর গ্রামীণ ও ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ঘুরে মেদিনীপুর মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি হন। ৩১ মার্চ তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এ বার ওই যুবকের বাবাও করোনা আক্রান্ত হওয়ায় গোটা এলাকায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

Advertisement

দাসপুরে ওই যুবকের গ্রাম আগেই সিল করা হয়েছিল। সতর্কতা আরও বাড়ছে। যে গাড়িতে ওই যুবক দাসপুরে ফিরেছিলেন, তার দুই যাত্রীর খোঁজও মিলেছে। দু’জনেরই বাড়ি ঘাটালে। বুধবার ওই দুই যুবক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বীরসিংহে আইটিআই গেস্ট হাউসের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। গাড়ির চালকের বাড়ি পাঁশকুড়ায়। ঘাটালের এসডিপি অগ্নিশ্বর চৌধুরী বলেন, “ওই দুই যুবকও মুম্বইয়ে থাকতেন। ২২ মার্চ কুরলা এক্সপ্রেসে এসে পাঁশকুড়ায় নেমেছিলেন। তারপর গাড়ি ভাড়া করে ঘাটালে ফিরছিলেন। পিতপুর থেকে ওঠেন দাসপুরের যুবক।”

ওই যুবক গ্রামে কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তার খোঁজ করেছে পুলিশ-প্রশাসন। যুবকের পরিজনেদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি ওই যুবকের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে তাঁর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। সূত্রের খবর, ওই যুবক বাবা, মা, স্ত্রী, দাদা, বৌদি-সহ ৭ জনের সরাসরি সংস্পর্শে এসেছিলেন। পরোক্ষভাবে আরও অনেকের সংস্পর্শে এসেছেন তিনি। এখন তাঁর বাবা পরোক্ষভাবে কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, সেই খোঁজও শুরু হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই যুবকের বাবা ধানের গোলায় কাজ করতেন। এছাড়া শসা ও আনাজ নিয়ে দাসপুরের একাধিক বাজারে গিয়েছিলেন। সকাল-সন্ধ্যায় গ্রাম লাগোয়া দোকানেও নিয়মিত আড্ডা দিতে গিয়েছেন তিনি। গ্রামের কয়েকজনের বাড়িতেও গিয়েছিলেন। আপাতত সড়বেড়িয়া কোয়রান্টিন কেন্দ্রে রয়েছেন যুবকের জেঠু-সহ বেশ কয়েকজন পরিজন। তাঁদের সঙ্গেও কথা বলে সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে।

জানা গিয়েছে, ওই যুবকের বাবা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরেও একাধিকজনের পরোক্ষ সংস্পর্শে এসেছেন। কারণ, ছেলে যখন এখানে ভর্তি ছিলেন, তখন তিনি হাসপাতাল চত্বরে অবাধে ঘুরেছেন। হাসপাতালের এক কর্মী বলছিলেন, ‘‘আমি ওই যুবকের বাবার সঙ্গে কথা বলেছিলাম সোমবার সকালে। খানিক দূর থেকেই কথা বলেছিলাম। তবে যুবকটির বাবাও করোনা আক্রান্ত শুনে এখন ভয় করছে।’’ জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘‘ছেলে এবং বাবা, দু’জনই পরোক্ষভাবে কাদের সংস্পর্শে এসেছেন দেখা হচ্ছে। চিহ্নিত করা সম্ভব হলে সকলেরই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। তবে সকলকে চিহ্নিত করা কঠিন। তাও চেষ্টা চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement