পরিকল্পনা হচ্ছে, জানালেন কারামন্ত্রী

মুক্ত সংশোধনাগারে সপরিবার থাকবে বন্দিরা

চাইলে মুক্ত সংশোধনাগারে বন্দিরা যাতে পরিবারের সঙ্গেই থাকতে পারে, সেই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। এ ক্ষেত্রে সংশোধনাগারের মধ্যেই ঘর থাকবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০০:৪৬
Share:

মুক্ত সংশোধনাগার তৈরির জমি দেখতে মঙ্গলবার শহরে এসেছিলেন রাজ্যের কারামন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক মৃগেন মাইতি। তাঁরা মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেও যান। নিজস্ব চিত্র

চাইলে মুক্ত সংশোধনাগারে বন্দিরা যাতে পরিবারের সঙ্গেই থাকতে পারে, সেই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। এ ক্ষেত্রে সংশোধনাগারের মধ্যেই ঘর থাকবে। এক-একটি ঘরে এক-একটি পরিবার থাকবে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে বলে মঙ্গলবার মেদিনীপুরে এসে জানালেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অবনী জোয়ারদার।

Advertisement

মেদিনীপুরে মুক্ত সংশোধনাগার তৈরি হবে। এ জন্য নির্দিষ্ট জায়গা পরিদর্শনেই এ দিন এসেছিলেন কারামন্ত্রী। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে তিনটি মুক্ত সংশোধনগার রয়েছে। মেদিনীপুরে আরও একটি মুক্ত সংশোধনাগার হবে।” এরপরই তাঁর সংযোজন, “জেলখাটার পরে আবাসিকেরা সমাজের মূলস্রোতে ফিরুক, সরকার এটাই চায়। চার দেওয়ালের মধ্যে একা থাকলে কষ্ট হয়। সঙ্গে পরিবার থাকলে এই কষ্টটা থাকে না। মুক্ত সংশোধনাগারে আবাসিকেরা যাতে পরিবারের সঙ্গেই থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থা হচ্ছে।”

মুক্ত সংশোধনাগারে কারা থাকবেন? কারামন্ত্রীর জবাব, “যাঁরা ১৫ বছর কিংবা তার বেশি সময়ে ধরে জেলে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই বাছাই করে বেশ কয়েকজনকে এখানে রাখা হবে। মুক্ত সংশোধনাগারের আবাসিকেরা সারা দিন বাইরে কাজ করতে পারবেন। সন্ধ্যার সময়ে ফিরে আসতে পারবেন। বাইরে কাজ করে তাঁরা রোজগারও করতে পারবেন।”

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আসেন কারামন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি। ছিলেন এডিজি (কারা) অরুণকুমার গুপ্ত সহ কারা দফতরের পদস্থ আধিকারিকেরা। বেশ কিছুক্ষণ জেলে ছিলেন কারামন্ত্রী। সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেন। যে জায়গাটি মুক্ত সংশোধনাগার তৈরির জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে সেখানেও যান। চারপাশ ঘুরে দেখেন। আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলেন। দুর্গাপুর, রায়গঞ্জ এবং লালগোলা- পশ্চিমবঙ্গের এই তিনটি জায়গায় এখন মুক্ত সংশোধনাগার রয়েছে। সাধারণত, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে থেকে আচার-আচরণ দেখেই বেশ কয়েকজন আবাসিককে বাছাই করা হয়। যাঁরা মুক্ত সংশোধনাগারে থাকেন। রাজ্যের তিনটি মুক্ত সংশোধনাগারে এখন প্রায় ১২০ জন রয়েছেন। মেদিনীপুরেও প্রায় ৬০ জন থাকতে পারেন। সেই মতো পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারা দফতরের এক কর্তার কথায়, “মুক্ত সংশোধনাগারে থাকা আবাসিকেরা জীবিকা অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন।” কারামন্ত্রী জানান, এই আবাসিকদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এখনও পর্যন্ত একটিই ঘটেছে। তার বেশি নয়।

মেদিনীপুরে এখনও মুক্ত সংশোধনাগার চালু হয়নি। তবে মাস খানেক আগে একস্ট্রাম্যুরাল গ্যাংয়ের (কারাপ্রাচীরের বাইরে খাটতে বেরোনো বন্দি) কাজ শুরু হয়েছে। মুক্ত জেলের ক্ষেত্রে আবাসিকদের বাইরে পেশার খোঁজে ঘুরে বেড়ানোই দস্তুর। কিন্তু সেন্ট্রাল জেল থেকে দীর্ঘদিন আবাসিকদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। ফের মেদিনীপুরে তা শুরু হয়েছে। জেল থেকে বেরিয়ে জেল সংলগ্ন জমিতে চাষের কাজ করছেন বেশ কয়েকজন আবাসিক। মঙ্গলবারও বেশ কয়েকজন আবাসিক জেলের বাইরে গিয়ে চাষের কাজ করেন। পাশাপাশি, মেদিনীপুরে এখন জেলের মধ্যে মুড়িও তৈরি করছেন আবাসিকেরাই। আবাসিকদের তৈরি সেই মুড়ি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এ দিন কারামন্ত্রীও বলেন, “জেলগুলোয় নানা রকম জিনিসপত্র তৈরি হয়। সরকারের লক্ষ্যই হল, এঁদের (আবাসিকদের) সাবলম্বী করা। যাতে ছাড়া পাওয়ার পরে বাইরে গিয়ে সহজে কাজের সুযোগ পায়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement