এই ছবি পোস্ট করেছেন সুপ্রকাশ গিরি (ব্লেজার পরিহিত)। তাঁর পাশে সাদা জামা পরে দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত শুভদীপ গিরি। —নিজস্ব চিত্র।
ধর্ষণে অভিযুক্ত। হাই কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। তবে অভিযুক্ত তৃণমূলের ছাত্র নেতা রয়েছেন বহাল তবিয়তেই! শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের জেলা সভাপতির সঙ্গে তিনি হাজির হচ্ছেন এক মঞ্চে। যা ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
গত বছর ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের এক ছাত্র নেতা শুভদীপ গিরির বিরুদ্ধে। পকসো আইনে মামলা রুজু করেছিল কাঁথি মহিলা থানার পুলিশ। প্রথমে অভিযুক্ত অধরা থাকলেও হাই কোর্টের নির্দেশে কাঁথি মহকুমা আদালতে ওই ছাত্র নেতা আত্মসমর্পণ করেন। পরে জামিনে ছাড়া পান। তবে তাঁকে জেলার বাইরে থাকার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। এমন আবহে সোমবার কাঁথি শহরের সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড এলাকায় একটি ক্লাবের সরস্বতী পুজোর খুঁটিপুজোর অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন শুভদীপ। আর তাঁর সঙ্গে সেখানে ছিলেন কাঁথি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা যুব তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি।
ধর্ষণে অভিযুক্ত ছাত্র নেতার সঙ্গেই রয়েছেন সংগঠনের জেলা সভাপতি— এই ছবি সামনে আসতেই দুশ্চিন্তায় নির্যাতিতার পরিবার। হাই কোর্টের নির্দেশ কীভাবে অভিযুক্ত অমান্য করছেন, সে নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। নির্যাতিতার বাবা বলছেন, ‘‘অভিযুক্ত বহাল তবিয়তে কাঁথিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শাসক দলের নেতাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে দেখা করছেন। বন্ধুদের নিয়ে বাড়িতে চড়াও হয়ে সিসি ক্যামেরা ভেঙে দিয়েছে। পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে। তবুও পুলিশ কিছু করেনি। খুব আতঙ্কে রয়েছি।’’ অভিযুক্ত ছাত্র নেতার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফোন করা হয়। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।
সোমবার যে ক্লাবের খুঁটি পুজো ছিল, সেটির সঙ্গে শুভদীপ যুক্ত বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। ক্লাবের অনুষ্ঠানের সূচনা করেন সুপ্রকাশ। পরে ওই ছাত্র নেতার সঙ্গে থাকা ছবি ফেসবুকেও পোস্ট করেন সুপ্রকাশ। যাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ, যাঁকে হাই কোর্ট জেলার বাইরে থাকতে বলছে, তাঁর সঙ্গে কীভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন? তবে কি আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত দলের ছাত্র নেতাকে সমর্থন করছেন? এ বিষয়ে সুপ্রকাশ সাফ জবাব, ‘‘আইনি বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। কোনও মন্তব্য করব না।’’
সুপ্রকাশ মন্তব্য করতে না চাইলেও তাঁর বিরুদ্ধে সরব বিরোধীরা। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলছেন, ‘‘গোটা রাজ্য অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল। পুলিশ ও শাসক দলের নেতারা প্রকাশ্যে সহযোগিতা করছেন। এতে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আদালত অবমাননার অভিযোগে অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত।’’ সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলছেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে পুলিশ তৃণমূলকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছে। তার ফলশ্রুতি হিসাবে কাঁথিতে ধর্ষণ-কাণ্ডের অভিযুক্ত ছাত্র নেতা হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর তাঁর সঙ্গে যে সব তৃণমূলের নেতারা ঘুরছেন, তাঁরাও একই অপরাধে অপরাধী। সৎ সাহস নেই বলে তৃণমূলের যুব সভাপতি কোনও মন্তব্য করছেন না।’’