প্রতীকী ছবি।
অনাস্থার আবহে আবার নাটক রামজীবনপুর পুরসভায়। নিজের ক্ষমতা বলে পুরপ্রধান নিয়োগ করলেন নতুন উপ-পুরপ্রধান। নিয়ম হল, উপ পুরপ্রধান নিয়োগের সময় সমস্ত কাউন্সিলরদের জানাতে হয়। এ ক্ষেত্রেও জানানো হয়েছিল। তবে ডাকযোগে।
বিজেপির অভিযোগ, তাদের কাউন্সিলদের হাতে চিঠি পৌঁছনোর আগে তৃণমূল কাউন্সিলর সুজিত পাঁজা নতুন উপ-পুরপ্রধান নিবার্চিত হয়েছেন। এর প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজেপি। তৃণমূল অবশ্য বলছে, যা হয়েছে নিয়ম মেনে হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে বিজেপি অনাস্থার আনার পরই একের পর কাণ্ড ঘটছে রামজীবনপুর। ঘটনাচক্রে, ওই অনাস্থার পরই রামজীবনপুর ফাঁড়ির আইসি (ইনচার্জ) সমর লায়েক বদলি হয়েছেন, বিজেপির দুই কাউন্সিলর শিউলি সিংহ (ভট্টাচার্য) ও রিঙ্কু নিয়োগীকে অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে কখনও প্রলোভন কখনও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। আইসি বদলিকে প্রশাসন রুটিন বলে দাবি করেছে। তবে ফোনে হুমকির অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, ঘটনাটির তদন্ত চলছে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই প্রাক্তন চেয়ারম্যান শিবরাম দাস মোবাইল সুইচড অফ করে রেখেছেন। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর শহরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সভাও রয়েছে। তার আগে উপ পুরপ্রধান নিয়োগ করে জল্পনা জিইয়ে রাখল তৃণমূল।
পুরসভা সূত্রের খবর, বুধবার উপ পুরপ্রধান নিবার্চিত হয়। নিয়ম হল,পুরপ্রধান তাঁর ক্ষমতা বলে উপ পুরপ্রধান নিয়োগ করতে পারেন। তবে বোর্ড অফ কাউন্সিলের উপস্থিতিতেই করতে হয়। বিজেপির অভিযোগ, ৪ সেপ্টেম্বর অনাস্থার আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। উপ-পুরপ্রধান নিয়োগের জন্য যে চিঠি কাউন্সিলরদের দেওয়া হয়েছে, সেখানে ৭ সেপ্টেম্বরের সই রয়েছে। ডাকঘরে পোস্ট করা হয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর। ১১ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টোর পর একেক করে কাউন্সিলরদের বাড়িতে চিঠি যায়। তবে তার আগে সকাল ১১টার সময় উপ পুরপ্রধান নিয়োগ হয় বলে অভিযোগ। রামজীবনপুর পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর গোবিন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, “চেয়ারম্যান অন্যায় ভাবে উপ-পুরপ্রধান নিয়োগ করেছেন। আমরা প্রশাসনকে জানাচ্ছি।” পুরপ্রধান নির্মল চৌধুরী অবশ্য বললেন, “যা করা হয়েছে আইন মেনে করা হয়েছে।”
বছর খানেক আগে পুরসভার উপ-পুরপ্রধান শিউলি সিংহ (ভট্টাচার্য) তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। সেই থেকেই উপ-পুরপ্রধানের পদটি খালি ছিল। এতদিন পর কেন উপ পুরপ্রধান নিয়োগ? রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সময় কিনতেই তৃণমূলের এমন পদক্ষেপ। নির্দিষ্ট সময়ে চেয়ারম্যান তলবি সভা না ডাকলে উপ পুরপ্রধান সাতদিনের মধ্যে তলবি সভা ডাকতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যদি মামলাও হয় তা হলেও কিছুটা সময় তৃণমূল পেয়ে যাবে। তা ছাড়া সামনে পুজোর লম্বা ছুটি। এই দীর্ঘ সময়ে বদলে যেতে পারে রাজনৈতিক সমীকরণ।
সামনেই পুরসভার ভোট। তার আগে খড়্গপুর বিধানসভায় উপনিবার্চন। রাজনৈতিক পযবের্ক্ষকদের মত, রামজীবনপুর হাতছাড়া হলে প্রভাব পড়তে পারে ঘাটাল-সহ অন্য পুরসভায়। তাই এই সময় কেনার কৌশল। বিজেপির জেলা সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “রামজীবনপুর পুরসভায় বিজেপির চেয়ারম্যান সময়ের অপেক্ষা। তৃণমূলের কোনও অঙ্ক কাজ করবে না।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “একটা পুরসভায় উপ পুরপ্রধান থাকেন এটাই নিয়ম। এতদিন ছিল না। এ বার নিয়ম মেনে সেই কাজটা করা হয়েছে।”